ঐতিহ্য হারিয়েছে, অস্তিত্ব হুমকিতে

দখলের পাশাপাশি নিয়মিত ময়লা-আবর্জনা ফেলায় মুন্সিগঞ্জের মিরকাদিম পৌর এলাকার রিকাবীবাজার খালটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। সম্প্রতি তোলা
ছবি: প্রথম আলো

ঐতিহ্যের পর এবার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে মুন্সিগঞ্জের মীরকাদিম পৌর এলাকার রিকাবীবাজার খাল। একসময় বড় বড় নৌকা ও লঞ্চ চলাচল করা খালটিতে এখন ঠিকমতো পানিই প্রবাহিত হয় না। উল্টো ময়লা-আবর্জনা ও মাটি ফেলে দখল করায় এর অস্তিত্ব হুমকিতে পড়েছে। খালটি খনন ও দখলমুক্ত করার আশ্বাস দিয়ে এলেও, জেলা প্রশাসন থেকে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় এক কিলোমিটার। এটি ২০০ বছরের বেশি পুরোনো। ধলেশ্বরী নদীর কাঠপট্টি ঘাট থেকে খালের উৎপত্তি। মীরকাদিম পৌরসভার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ইছামতী নদীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এই খাল দিয়ে কমলাঘাট নৌবন্দরে বড় বড় নৌকা দিয়ে মালামাল পরিবহন করা হতো। চলত লঞ্চও। বর্ষার সময় পানিতে থই থই করত। এখন খালের বিভিন্ন জায়গা দখল হয়ে গেছে। প্রতিদিন পৌরসভা, বাজারের দোকান এবং বিভিন্ন মার্কেটের আবর্জনা খালে ফেলা হচ্ছে।

রিকাবীবাজার ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা গোলজার হোসেন বলেন, খালটি সম্পূর্ণ নাব্যতা হারিয়েছে। খালটির দুই পাশে মীরকাদিম পৌরসভা, বাজার কমিটি, পঞ্চায়েত কমিটি, মসজিদ কমিটি, কয়েকটি সমিতি ও কয়েক ব্যক্তি ২০-২৫টি স্থানে ময়লা ও মাটি ফেলে দখল করে নিয়েছেন। তাঁদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। খালটি দখলমুক্ত করে প্রশাসনের মাধ্যমে দ্রুত সীমানা নির্ধারণ করা দরকার।

সরেজমিন গত শনিবার দেখা যায়, খালটির ওপর কাঁচা-পাকা ৮-৯টি সাঁকো-সেতু রয়েছে। এসব সাঁকো-সেতুর দুই পাশসহ ১০-১৫টি স্থানে ময়লা-আবর্জনার বিশাল বিশাল স্তূপ। সবচেয়ে বেশি রিকাবীবাজার খালের জোড়া সেতুর নিচে। ধলেশ্বরী ও ইছামতী নদীর মুখ দুটিও নাব্যতা হারিয়ে শুকিয়ে আছে। খালটি ঘাস ও লতাপাতায় জটলা বেঁধে আছে। খালের দক্ষিণ পাশে যেসব দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলোর পেছনের অংশ খাল ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে। উত্তর প্রান্তে খালে খুঁটি পুঁতে দখল করে তৈরি করা হয়েছে কাঠ ও আসবাবের দোকান।

মীরকাদিম পৌর খাল রক্ষা কমিটি সূত্রে জানা যায়, খালটি দখলমুক্ত ও পুনরায় খননের দাবিতে ২০১২ সালে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদানসহ বহু কর্মসূচি পালন করা হয়। তৎকালীন জেলা প্রশাসক খাল রক্ষায় বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছিলেন। বেশ কয়েকটি স্থাপনা উচ্ছেদও করেছিলেন। কিন্তু সেই উদ্যোগ আর সামনে এগোয়নি। ফলে আবার খালটি অস্তিত্ব হারাতে বসেছে।

রিকাবীবাজার পৌর খাল রক্ষা কমিটির সদস্যসচিব এম এ রিন্টু বলেন, দোকান ও স্থাপনা নির্মাণ করে খালটি দখল করে নিচ্ছেন প্রভাবশালীরা। বাজার, পৌরসভার সব এলাকার ময়লা-বর্জ্য ফেলে খালটি ভরাট হয়েছে। প্রভাবশালীদের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে এ নিয়ে তাঁরা অনেক আন্দোলন করেছেন। প্রশাসন একের পর এক প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। অথচ খাল রক্ষায় তারা কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

স্থানীয় চিত্রশিল্পী তাহের মাহমুদ বলেন, ‘স্থানীয় ব্যক্তিমালিকানার জলাশয়গুলো অনেক আগেই ভরাট হয়ে গেছে। প্রাকৃতিক পানির উৎস ছিল খালটি। এটিও মরে যাচ্ছে। আমরা চাই, যেকোনোভাবে খালটির প্রবাহ ফিরিয়ে আনা হোক।’

খালে ময়লা ফেলার বিষয়ে জানতে মীরকাদিম পৌরসভার মেয়র আবদুস সালামের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (ঢাকা বিভাগ) রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, মুন্সিগঞ্জের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাল খননের ব্যাপারে উদ্যোগ নিচ্ছেন তাঁরা। এর মধ্য রিকাবীবাজার খালটিও রয়েছে। তবে বড় সমস্যা হচ্ছে, খালের উৎসমুখ ও যে পথ দিয়ে পানি অপসারণ হবে, সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। এগুলো অপসারণ না করে মধ্যভাগে খাল খনন করা হলে পানির প্রবাহ আসবে না।

মুন্সিগঞ্জের বর্তমান জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল বলেন, দেশের ছোট-বড় প্রতিটি খাল উদ্ধার ও সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য সরকার কাজ করে চলেছে। খালটির বিষয়ে তাঁর জানা ছিল না। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে খাল উদ্ধার, সীমানা নির্ধারণ, খননসহ সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।