কংস নদ গিলছে জনপদ

নেত্রকোনার দুই উপজেলায় ১৯৯৮ সাল থেকে কংস নদে ভাঙন চলছে। নদভাঙন বন্ধে আজও কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

নেত্রকোনায় কংস নদে ভয়াবহ ভাঙন চলছে। মঙ্গলবার বিকেলে নদের কর্ণপুর এলাকায়।
প্রথম আলো

নেত্রকোনা সদর ও বারহাট্টা উপজেলার পাঁচ গ্রামে কংস নদে ভয়াবহ ভাঙন চলছে। প্রায় দুই যুগ ধরে নদভাঙনে সহস্রাধিক মানুষের বসতভিটা, ফসলি জমি, বাজার, গ্রাম রক্ষা বাঁধ ও সড়ক বিলীন হয়ে গেছে।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, নদভাঙন প্রতিরোধে পাউবো যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে ওই পাঁচ গ্রামে নদভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে গ্রামগুলোর বাসিন্দারা কংস নদের ভাঙন বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নেত্রকোনা কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কংস নদের বারহাট্টা উপজেলার ফকিরের বাজার, চরপাড়া, কর্ণপুর ও বাড়ি তাতিয়র এবং সদর উপজেলার পাঁচপাই ও বাঘরুয়া গ্রামের বাড়িঘর ভেঙে যাচ্ছে। গত ২৪ বছরে ওই সব গ্রামে সহস্রাধিক পরিবারের বাড়িঘর, তিন হাজার একর ফসলি জমি কংস নদের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ সময়ে ফকিরের বাজারের প্রায় দুই শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নদে বিলীন হয়ে গেছে। নদভাঙন অব্যাহত থাকায় হুমকির মুখে রয়েছে এসব গ্রামের আরও সহস্রাধিক মানুষের বসতভিটা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, কংস নদের ভাঙনে গত চার বছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীন ঠাকুরাকোনা-ফকিরের বাজার সড়কের চরপাড়া এলাকায় প্রায় এক কিলোমিটার অংশ বিলীন হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো ভাঙন বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না।

সনদভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন বলেন, ১৯৯৮ সাল থেকে কংসে নদে ভাঙন চলছে। এই দীর্ঘ সময়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নদভাঙন প্রতিরোধের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেননি। বর্ষা এলেই পাউবোর কর্মকর্তারা নদভাঙনকবলিত এলাকায় এসে মাপজোখ করে চলে যান। কিন্তু এরপর আর কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

কর্ণপুর গ্রামের সাহেব উদ্দিন, স্বপন সরকার, সত্যেন্দ্র বর্মণ, জামাল মিয়া, সবুর মিয়া, সেলিম মিয়া বলেন, নদটা তাঁদের বাড়ির অনেক দূরে ছিল। ভাঙতে ভাঙতে এখন তাঁদের বর্তমান বাড়ির কাছে চলে এসেছে। তাঁরা নদভাঙনের কারণে পাঁচবার স্থান পরিবর্তন করে বাড়ি করেছেন। এখন আর্থিক সংগতি না থাকায় তাঁরা বাড়ি সরিয়ে নিতে পারছেন না।

কর্ণপুর গ্রামের রাসেল আরাফাত বলেন, ‘বসতভিটার পাশাপাশি হুমকির মুখে আছে চলাচলের একমাত্র সড়কটিও। ওই সড়কসহ ওই দুই গ্রামে নদের তীরে স্থায়ী বাঁধ না দিলে আরও কয়েক হাজার বাড়িঘর হুমকিতে পড়বে।’

কর্ণপুর গ্রামের খোকন মজুমদার বলেন, ‘আমরা কয়েক বছর ধরে বাঁধ নির্মাণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না।’

রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান বলেন, ‘কংসের ভাঙনে এ পযন্ত সহস্রাধিক পরিবার ভিটাছাড়া হয়েছে। হাজার হাজার একর জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গ্রাম রক্ষা বাঁধসহ সড়কটি রক্ষায় বিভিন্ন সময় পাউবোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো কাজ হয়নি।’

কংস নদের ভাঙনের বিষয়ে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত বলেন, ‘ভাঙন রোধে ৩৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব প্রস্তুত করে পাউবোর প্রধান কার্যালয়ে জমা দেওয়া হবে।’