‘কবে যে সবকিছুর দাম স্বাভাবিক হবে’
সাব্বির আহমেদের দিন শুরু হয় চায়ের কাপে টুংটাং আওয়াজের মধ্য দিয়ে। ৩০ বছরের জীবন। দরিদ্র পরিবারে জন্ম, তাই পুরো জীবনটাই সংগ্রামের। আর্থিক অসংগতি আর ছোটবেলার দুরন্তপনা দুটিই বাধ সেধেছে তাঁর শিক্ষায়। সে কারণে পারেননি প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোতে। এ বয়সেই বদলেছেন পাঁচটি পেশা—দরজির কাজ, তেলের মিলের শ্রমিক, চটপটি বিক্রেতা, ইজিবাইকের চালক ও শরবত বিক্রেতা। এবার থিতু হয়েছেন চা বিক্রিতে। ছয়জনের পরিবার তাঁর এই চা বিক্রির উপার্জনেই দিন কাটিয়ে দিচ্ছে।
সাব্বিরের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের ধামচাইলের রাজাপাড়া গ্রামে। বাবা গত হয়েছেন বেশ আগেই। এখন মা, বড় ভাই, ভাবি, তাঁদের দুই সন্তান ও বোনকে নিয়ে থাকেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মধ্যপাড়ার একটি ভাড়া বাসায়। বড় ভাই অসুস্থ, তাই শহরের পৌর সুপারমার্কেটের পেছনে চায়ের দোকানটি চালাতে হচ্ছে সাব্বিরকেই।
সকাল আটটা থেকে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত চা বিক্রি করেন সাব্বির। রং চা ৫ টাকা, দুধ চা ৮ টাকা; সঙ্গে থাকে বিস্কুট, পাউরুটি, কেক, কলা। সাব্বির জানান, প্রতিদিন চা তৈরি, কেক-কলা কিনতে তাঁর ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা খরচ হয়। খরচ বাদ দিয়ে আয় থাকে গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এ দিয়েই চলে ছয়জনের সংসার।
দ্রব্যমূল্যের এমন ঊর্ধ্বগতির বাজারে আর বহু মানুষের মতো সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন চা বিক্রেতা সাব্বিরও। তিনি বলেন, ‘শহরের মধ্যপাড়ায় ভাড়া বাসায় থাকি। ভাড়া দিতে হয় ৫ হাজার টাকা। সংসারের কেনাকাটা আমার মা করেন। তবে আমি বুঝি, মায়ের অনেক কষ্ট হয়। সংসার চালাতে খুব কষ্ট হয় ওনার। কারণ সবকিছুর দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কিন্তু আমার তো সীমিত আয়। চা বিক্রি করে আর কত টাকাই–বা রোজগার করা যায়।’
সাব্বির জানান, দোকানে প্রায় ১৩ ঘণ্টা ধরে চা বিক্রি করেন তিনি। চারপাশের বিভিন্ন দোকান ও দপ্তরে গিয়ে তাঁকে চা পৌঁছে দিতে হয়। বেশি টাকা দিয়ে লোকজন রাস্তার দোকানের চা খেতে চান না। অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের পাশাপাশি চা বানানোর অন্যতম উপকরণ দুধের দামও বেড়েছে। ফলে খুব বেশি লাভও করতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘চায়ের দোকান থেকে সংসারের খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাসাভাড়া, খাবারসহ অন্যান্য খরচ চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। চা বানানোর কাজ ছেড়ে দিতে মন চায়। কিন্তু আশপাশের মানুষের সঙ্গে একটা মায়ার সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে। কবে যে সবকিছুর দাম স্বাভাবিক হবে।’