রাজশাহীতে করোনা
করোনামুক্ত ১৯% রোগী নানা জটিলতায়
আইসিইউতে যাওয়া রোগীদের মধ্যে নেগেটিভ রোগী প্রায় ৪০ শতাংশ। চিকিৎসকেরা বলছেন, ডেলটা ভেরিয়েন্টে ‘পোস্ট কোভিড’ জটিলতা বাড়ছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা করোনা নেগেটিভ হওয়ার পরও হাসপাতাল ছাড়তে পারছেন না। আর ছাড়লেও আবার ফিরে আসতে হচ্ছে। গত সপ্তাহে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর হিসাব নিয়ে দেখা যায়, গড়ে ১৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ রোগী নেগেটিভ হওয়ার পরও শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছেন।
আইসিইউতে যাওয়া রোগীদের মধ্যে নেগেটিভ রোগী প্রায় ৪০ শতাংশ। চিকিৎসকেরা বলছেন, ডেলটা ভেরিয়েন্টে ‘পোস্ট কোভিড’ জটিলতা বাড়ছে। হাসপাতালে এ ধরনের রোগীও বাড়ছে।
গত এক সপ্তাহের মধ্যে (৪ থেকে ১০ আগস্ট) সর্বোচ্চ নেগেটিভ রোগী ভর্তি ছিলেন ৬ আগস্ট। ওই দিন মোট রোগী ছিলেন ৪০৩ জন। নেগেটিভ হওয়ার পরও চিকিৎসাধীন ছিলেন ৭৯ জন। নেগেটিভ হওয়ার পরও চিকিৎসাধীন রোগীরা মারা যাচ্ছেন। গত এক সপ্তাহে নেগেটিভ হওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৪ জন। আর করোনায় মোট মারা গেছেন ৩৬ জন। দেখা যাচ্ছে, এই মৃত্যুহার ৩৮ দশমিক ৮৮। গত জুলাই মাসজুড়েই হাসপাতালে নেগেটিভ হওয়ার পর চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা প্রায় এ রকমই ছিল।
মুমূর্ষু রোগীদের আইসিইউতে নেওয়া হচ্ছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে ২০টি শয্যা রয়েছে। গত সোমবার সেখানে ২০ জন রোগীর মধ্যে ৮ জনই ছিলেন করোনা নেগেটিভ। সেই হিসাবে, আইসিইউর ৪০ শতাংশই করোনা নেগেটিভ রোগী।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম ইয়াজদানী বলেন, করোনা থেকে সুস্থ হয়ে বাড়িতে গিয়েও অনেক রোগী ফিরে আসছেন। তাঁদের অনেকেরই হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, পাকস্থলী, কিডনি অকার্যকরসহ বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দিচ্ছে। এটা নতুন ধরনের রোগ। করোনা যা করার, প্রথম সাত দিনের মধ্যেই করে ফেলছে। করোনা দেহের অনেক কিছুই অচল করে দিয়ে চলে যাচ্ছে। তারপর যা হওয়ার তা–ই হচ্ছে।
রিক্তা বেগম (৬৫) ও তাঁর মেয়ে বীথি খাতুন (২৪) দুজনই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। গত ১৯ জুলাই তাঁদের নওগাঁয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরের দিন সেখান থেকে তাঁদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২১ জুলাই পরীক্ষায় তাঁদের করোনা নেগেটিভ আসে। মেয়ে সুস্থ হয়ে গেছেন। কিন্তু মাকে ২৪ জুলাই আইসিইউতে নিতে হয়েছে। করোনা না থাকলেও তাঁকে আইসিইউ থেকে সাধারণ ওয়ার্ডেও নেওয়া যাচ্ছে না। গত মঙ্গলবার বিকেলে রিক্তা বেগম মারা যান। এই নারীর সঙ্গে এত দিন হাসপাতালে ছিলেন তাঁরই এক প্রতিবেশী। তিনি বলেন, এই নারীর পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর পাশে দাঁড়ানোর কেউ ছিল না। তাই তিনি পাশে ছিলেন।
* করোনা যা করার, প্রথম সাত দিনের মধ্যেই করে ফেলছে। করোনা দেহের অনেক কিছুই অচল করে দিয়ে চলে যাচ্ছে। * রাজশাহী মেডিকেলে আইসিইউতে ২০টি শয্যা রয়েছে। সোমবার সেখানে ২০ রোগীর মধ্যে ৮ জনই ছিলেন করোনা নেগেটিভ।
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার অনুপমপুর গ্রামের আবদুল কুদ্দুসকে (৬৫) গত ২৬ জুলাই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ২৯ জুলাই তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা করে জানা গেছে, ৩১ জুলাই থেকে তিনি করোনা নেগেটিভ হয়ে গেছেন। কিন্তু তাঁকে আইসিইউ থেকে সাধারণ ওয়ার্ডে নেওয়া যাচ্ছে না। তাঁর ছেলে সুমন বাপ্পী বলেন, করোনা নেগেটিভ হয়ে গেলেই ভালো হয়ে যাবেন, এমনটি ভাবার সুযোগ নেই।
শাহানা পারভীনকে (৩২) গত ১০ জুলাই চাঁপাইনবাবগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। অবস্থার অবনতি হলে ১৮ জুলাই তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ২১ জুলাই তিনি করোনা নেগেটিভ হন। পরের দিনই তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। তাঁর স্বামী আবুল হাসান জানালেন, এখনও তাঁকে আইসিইউতে রেখেই চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার কিশোরপুর গ্রামের আবদুল মালেক (৬০) করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২১ জুন থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর ছেলে মেহের হোসেন জানান, গত ২ জুলাই তাঁর বাবার করোনা নেগেটিভ হয়। তাঁকে ছুটিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাড়িতে গিয়ে কোনো লাভ হয়নি। তাঁর বাবাকে আবার হাসপাতালে নিয়ে আসতে হয়েছে। তারপরও তাঁর বাবার অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ২৬ জুলাই তিনি হাসপাতালের ১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউর ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, করোনা নেগেটিভ হওয়ার পর শারীরিক নানা জটিলতা নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আইসিইউতেও আগের চেয়ে এই রোগী বেশি হচ্ছে।