করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর সুনামগঞ্জে ২৫০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতালের একটি ভবনে ১০০ শয্যার করোনা ইউনিট চালু হয়েছিল। দীর্ঘদিন এই ওয়ার্ড অনেকটা খালি পড়ে ছিল। কিন্তু এখন জেলায় করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে করোনা ইউনিটেও রোগীর চাপ বাড়ছে। কিন্তু জটিল রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য এখানে নেই নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ও হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা। এমনকি কেন্দ্রীয় অক্সিজেন প্ল্যান্টও এখনো চালু করা যায়নি। ফলে সুনামগঞ্জের মানুষদের এই সেবা পেতে এখনো যেতে হয় সিলেটে।
সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে এখন করোনায় আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। মঙ্গলবার সকাল নয়টায় করোনা ইউনিটে ভর্তি ছিলেন ৪২ জন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত দুই দিনে সাতজনকে পাঠানো হয়েছে সিলেটের করোনা চিকিৎসাকেন্দ্র শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে। সুনামগঞ্জে রোগীদের সিলিন্ডারে সর্বোচ্চ ১০ লিটার অক্সিজেন দেওয়া যায়। রোগীর অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে মিনিটে ৩০ থেকে ৪০ লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন দিতে হয়। তখন দরকার পড়ে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলার। এ অবস্থায় রোগীর আইসিইউ প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু সুনামগঞ্জে এসব না থাকায় রোগীদের সিলেটে পাঠানো হয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ইউনিসেফের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সদর হাসপাতালে ১০ শয্যার আইসিইউ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর আড়াই মাস আগে আইসিইউ ও কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহব্যবস্থা চালুর কাজ শুরু হয়। জুন মাসের মধ্যেই এটি চালুর কথা ছিল। হাসপাতালের পুরোনো ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি ওয়ার্ডকে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে সেখানে আইসিইউ স্থাপনের জন্য সংস্কারকাজ করছে গণপূর্ত বিভাগ। পাশাপাশি ওই ভবনের পাশেই সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্টের জন্য একটি ভবন নির্মাণের কাজ চলছে।
নির্মাণকাজে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় অক্সিজেন প্ল্যান্টের ভবনের নির্মাণকাজে শুরুতে কিছু ত্রুটি ছিল। সেগুলো ত্রুটিমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়ায় কাজে বিলম্ব হয়। আবার দেশের অন্যান্য অঞ্চলে করোনার প্রকোপ বেশি থাকায় সেসব অঞ্চলে আগে আইসিইউ এবং কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহব্যবস্থা চালুতে জোর দেওয়ায় সুনামগঞ্জের কাজটি পিছিয়ে যাচ্ছে। এখানে আইসিইউ চালুর সঙ্গে চিকিৎসকসহ প্রয়োজনীয় লোকবলের বিষয় যুক্ত রয়েছে। আইসিইউর জন্য তিনজন অবেদনবিদ প্রয়োজন। কিন্তু হাসপাতালে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসার জন্য মাত্র একজন অবেদনবিদ আছেন। আইসিইউ চালানোর জন্য প্রশিক্ষিত জনবলও প্রয়োজন।
হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সুনামগঞ্জে আইসিইউ, হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা নেই, এটি অনেকেই জানেন। যে কারণে জটিল রোগীরা আগে থেকেই সিলেটে চলে যান। আবার এখানে ভর্তি হওয়া রোগীদের অবস্থা বিবেচনায় তাঁদেরও সিলেটে পাঠানো হয়। তবে সুনামগঞ্জে আইসিইউ ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহব্যবস্থা চালু হলে মানুষকে সিলেটে যেতে হবে না।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের তেঘরিয়া এলাকার বাসিন্দা জেলা পরিষদের সদস্য সৈয়দ তারিক হাসান বলেন, সুনামগঞ্জের করোনা পরিস্থিতি এখন ভালো নয়। আক্রান্ত ও মৃত্যু দুটোই বাড়ছে। এ অবস্থায় দ্রুত সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট ও আইসিইউ চালু জরুরি।
সুনামগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আইসিইউর জন্য নির্ধারিত ভবনের সংস্কারকাজ করে দিয়েছি। আমাদের কাজ শেষ। অন্য কাজের বিষয়ে আমার জানা নেই।’
জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (উপপরিচালক) মো. আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেছেন, আইসিইউ ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্টের কাজ চলছে। যত দ্রুত সম্ভব চালুর বিষয়ে তাগিদ আছে। তবে একেবারে দিনক্ষণ ঠিক করে বলা যাবে না কবে চালু হবে।
সুনামগঞ্জ-৪ আসনের (সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর) সাংসদ পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেছেন, আইসিইউ চালু বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ আছে। ইউনিসেফের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গেও তিনি কথা বলেছেন। তাঁরা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে আসছেন। আইসিইউ চালু করতে আরও মাস দেড়েক সময় লাগবে বলে তাঁকে জানানো হয়েছে।