করোনা মোকাবিলায় ফের সক্রিয় হচ্ছে সামাজিক কমিটি

বাইরে বের হওয়া একজনের কাছে থাকা প্রেসক্রিপশন যাচাই করে দেখছেন প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা। সম্প্রতি কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর এলাকায়।
ফাইল ছবি

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে করোনা প্রতিরোধে গঠিত সামাজিক কমিটি ফের সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুধু তা–ই নয়, জেলার ১৩টি উপজেলায় একই কার্যক্রম সচল হওয়ার অপেক্ষায় আছে।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের কাছ থেকে তাগিদ পাওয়ার পর প্রশাসন এ বিষয়ে নড়েচড়ে উঠেছে। আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়ির লকডাউন নিশ্চিত করা, মাস্ক পরিধানে সচেতনতা বাড়ানো ও ত্রাণ কার্যক্রমে গতি আনা হবে কমিটির মূল কাজ।
এবারের কমিটিতে বরাবরের মতো পদাধিকার বলে ওয়ার্ড সদস্য হবেন সভাপতি। এ ছাড়া রাজনীতিক, মসজিদের ইমাম, স্বাস্থ্যকর্মী, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, বিট পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কমিটির সদস্য করা হবে।

স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, করোনা সংক্রমণের শুরুতে জনপ্রতিনিধিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও বর্তমানে দৃশ্যমান উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। ফলে সংক্রমণ রোধ অনেকটা এককভাবে প্রশাসনের কাজে পরিণত হয়েছে। প্রশাসন দিনরাত মাঠে সক্রিয় থাকলেও শতভাগ ফল ঘরে তুলতে পারছিল না।

উপজেলা প্রতিরোধ কমিটি সূত্র জানায়, ভৈরবে গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ হার ছিল ৯০। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২৩ জন। জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ৭৬৭ জন। ৬১ হাজার ৯৮৪ জনের নমুনা থেকে এই সংক্রমণ পাওয়া গেছে। মারা গেছেন ১০৪ জন। বর্তমানে আক্রান্ত রয়েছেন ১ হাজার ৩০৯ জন। এই পরিস্থিতিতে করোনা মোকাবিলায় সামাজিক সম্পৃক্ততা বাড়ানোর তাগিদ অনুভব করা হচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব জেলা প্রশাসন, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জনদের অংশগ্রহণে ভার্চ্যুয়াল সভা করেছেন। সভা থেকে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি গঠনের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। মুখ্য সচিবের তাগিদের পর কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন ওই দিন সন্ধ্যায় জরুরি সভায় বসে। সভা থেকে উদ্যোগ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়।

ভৈরব পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী সোহাগ তাঁর ওয়ার্ডের ১১ সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক। শুরু থেকে তিনি করোনা প্রতিরোধে মাঠে সক্রিয় ছিলেন। এখন অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। জানতে চাইলে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আগে আমাদের নিয়ে প্রশাসনের লোকজন সভা করতেন। সাহস জোগাতেন। প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতেন। এখন আর এর কোনোটি নেই। ফলে আমাদের মনে হয়েছে, প্রশাসন এখন আমাদের প্রয়োজন অনুভব করছে না। এরপরও দায়িত্ব থেকে যতটুকু সম্ভব কাজ করে যাচ্ছি।’

সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনা প্রতিরোধে গঠিত ভৈরবের সামাজিক কমিটির এখন আর দৃশ্যমান কাজ নেই। সরকারের দপ্তরগুলো তাদের প্রয়োজন মনে করছে কি না, এই নিয়ে কমিটির অনেকের মধ্যে সংশয় রয়েছে। অথচ শুরুতে কেউ আক্রান্ত হলে হইচই পড়ে যেত। কিছু সময়ের মধ্যে ওই বাড়িতে প্রতিরোধ কমিটির সদস্যরা হাজির হয়ে যেতেন। বাড়িটি লকডাউনের আওতায় আনতেন। আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতি মানবিক আচরণ করাসহ নানা বিষয়ে প্রতিবেশীদের সচেতন করে যেতেন। ত্রাণ কার্যক্রমেও তাঁরা ছিলেন সামনের সারির যোদ্ধা। বর্তমানে কে কোন দিক দিয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন, কারও খবর কেউ রাখেন না। আক্রান্ত ব্যক্তি অতি সহজে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন। বলার কেউ নেই। কেবল স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফোনে যোগাযোগ রেখে স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিয়ে থাকেন।

উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. খুরশীদ আলম। তিনি উপজেলা প্রতিরোধ কমিটির সদস্যসচিব। খুরশীদ আলম বলেন, ‘ওপরের নির্দেশে আমরা আবার ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটিগুলো সক্রিয় করে মাঠে কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। তা না হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। কারণ, যা বুঝতে পারছি, এত দিনেও মানুষের মধ্যে সেভাবে সচেতনতা বাড়েনি। এখনো মাস্ক পরেন প্রশাসনের ভয়ে, রোগের ভয়ে নয়। সেই ক্ষেত্রে সামাজিক কমিটিগুলো বটিকা হিসেবে কাজ করতে পারে।’
প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুবনা ফারজানা বলেন, করোনা এখন মহাদুর্যোগ। দুর্যোগের মাত্রা না কমে, বরং বাড়ছে। এত বড় দুর্যোগ মোকাবিলায় শুধু প্রশাসন কিংবা গঠন করে দেওয়া কমিটির পক্ষে সম্ভব নয়। প্রতিরোধে সমাজের প্রত্যেকটি মানুষকে উদ্যোগী হবে। তবেই যদি ভালো দিনের দেখা পাওয়া যায়।