কাজে আসছে না ৬০ লাখ টাকার সোলার চার্জিং স্টেশন

রাজশাহীর বাগমারায় স্থাপন করা পরিত্যক্ত ৬০ লাখ টাকার সোলার চার্জিং স্টেশন
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীর বাগমারায় অটোভ্যান, ইজিবাইক চার্জের জন্য ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি ‘সোলার চার্জিং স্টেশন’ কোনো কাজে আসছে না। স্টেশনটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। এলাকার অটোভ্যান ও ইজিবাইক চালকেরা স্টেশন নিয়ে আশার আলো দেখলেও এখন হতাশ।

স্টেশনটির কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় চালকদের ভোগান্তির পাশাপাশি বিদ্যুতের ওপর চাপ বাড়ছে। পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের দাবি নির্দেশনা না থাকায় চালু করা যাচ্ছে না।

নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১–এর বাগমারা আঞ্চলিক দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়নের সাকোয়া নামের স্থানে শিকদারীতে ‘সোলার চাজিং স্টেশন’ স্থাপন করা হয়। স্থানীয় সাংসদ এনামুল হকের জমিতে স্টেশনটি স্থাপন করা হয়। এর আগে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ২০১৭ সালে উপজেলার হাটগাঙ্গোপাড়ায় এক জনসভায় বাগমারায় একটি ‘সোলার সার্জিং স্টেশন’ স্থাপনের ঘোষণা দেন। এরপর জায়গা নির্বাচন করে সেখানে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। সেখানে ৬০ লাখ টাকার অধিক ব্যয়ে স্টেশনটি নির্মাণ করে। সরকারি নিয়মানুসারে প্রতি ঘণ্টায় অটোভ্যানে চার্জে ৪০ ও ইজিবাইকে ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে একটি অংশ পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ ও আরেক অংশ জমির মালিক পাবেন। সে শর্তে স্টেশনটি স্থাপন করা হয়। ওই বছরেই সোলার প্যানেল বসানো ছাড়াও যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা হয়। উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুতও করা হয় স্টেশনটি। তবে দুই বছর ধরে সেটি চালু বা উদ্বোধন করা হয়নি। পরিত্যক্ত, অরক্ষিত ও অযত্নে পড়ে রয়েছে সোলার চার্জিং স্টেশন। জমির মালিকপক্ষের দাবি, এক পয়সাও পাওয়া যায়নি সেখান থেকে।

বুধবার সকালে সরেজমিনে সোলার চার্জিং স্টেশনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকতে দেখা যায়। ইটের প্রাচীরের ভেতরে প্যানেল বসানো হয়েছে। তবে চারপাশে প্রাচীর থাকলেও সেটি অরক্ষিত। সহজে সেখানে ঢোকা ও বের হওয়া যায়। প্যানেলে ধুলাবালুর স্তূপ জমে রয়েছে। ভেতরে আগাছায় ভরে গেছে। নিয়ন্ত্রণকক্ষটি নির্মাণের পর থেকে তালাবদ্ধ। স্থানীয় অর্ধশত বাসিন্দা বলেন, স্টেশনটি কোনো কাজে আসেনি। পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ স্টেশনটি নির্মাণের মাধ্যমে নিজেদের কাজ শেষ করেছে। এরপর থেকে সেটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।

স্থানীয় শতাধিক অটোভ্যান ও ইজিবাইকচালক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্টেশনটি স্থাপন হওয়ায় তাঁরা আশার আলো দেখেছিলেন। তবে সেটি চালু না হওয়ায় ভোগান্তি ও অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে। আবদুল জব্বার (৪৫), কামাল হোসেন (৩৭), বেলাল হোসেনসহ (৪৬) বেশ কিছু অটোভ্যানচালক বলেন, ভ্যানে চার্জ দিতে সমস্যায় পড়তে হয়। অনেক সময় লোডশেডিংয়ের কারণে চার্জ দেওয়া সম্ভব হয় না। নিজস্ব বৈদ্যুতিক মিটার না থাকায় অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। এতে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে ও ভোগান্তির শিকার হতে হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পল্লী বিদ্যুতের দুজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সোলার চার্জার স্টেশনটি চালু না হওয়ায় পল্লী বিদ্যুতের ক্ষতি হচ্ছে বেশি। উপজেলায় প্রায় ২৫ হাজার অটোভ্যান ও ইজিবাইক রয়েছে। এগুলো আবাসিক গ্রাহকেরা বাড়িতে চার্জ দিচ্ছেন। এতে বিদ্যুতের অপচয় ও চাপ বাড়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবেও ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। এসব গাড়ির চার্জ দিতে প্রতি মাসে ১২৫ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে বলে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বাণিজ্যিক হিসাবে বিল নেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা সম্ভব হয় না।

নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১–এর বাগমারার আঞ্চলিক দপ্তরের মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মিনারুল ইসলাম বলেন, এটি চালুর কোনো নির্দেশনা না থাকায় উদ্বোধন করা সম্ভব হয়নি। স্টেশনটি এখন কোনো কাজেই আসছে না। এটি দেখভাল করার জন্যও কোনো জনবল নেই।