কাজে ধীরগতি, ভোগান্তি

সড়কগুলোর কাজ ছয় মাসের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। একাধিকবার কাজের মেয়াদ বাড়ানোর পরও এখনো ৩০-৫০ শতাংশ নির্মাণকাজ বাকি।

রংপুর নগরের কাছারিবাজার থেকে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার পর্যন্ত সড়কটির সংস্কারকাজ চলছে ধীরে। সড়কের পাশে রাখা আছে বালুর স্তূপ। ফলে চলাচলে ভোগান্তি পোহাচ্ছে লোকজন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি কেরানিপাড়ায়
ছবি: প্রথম আলো

রংপুর নগরে ২৫টি সড়ক নির্মাণের কাজ ধীরগতিতে চলছে। কোথাও খুঁড়ে রাখা হয়েছে, আবার কোথাও নির্মাণসামগ্রী সড়কের ওপর ফেলে রাখা হয়েছে। ফলে নগরবাসী চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কাজের মেয়াদ বাড়ানোর পরও কাজের অগ্রগতি নেই।

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা সূত্র জানায়, প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরের পাড়া–মহল্লার ভেতর দিয়ে ২৫টি সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো তমা কনস্ট্রাকশন, কে কে আর, এমসিপিল, তাজ মঞ্জিল। এসব সড়ক নির্মাণকাজের দরপত্র হয় ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের মার্চ মাসে। প্রতিটি কাজের মেয়াদ নির্ধারিত ছিল ছয় মাস। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হয়নি। পরে এসব কাজের মেয়াদ এক থেকে দুই দফায় বাড়ানো হয়েছে। এখনো ৩০-৫০ শতাংশ নির্মাণকাজ বাকি।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্মাণাধীন সড়কগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কাচারি বাজার থেকে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, ভগিবালাপাড়া থেকে বউ বাজার, সিও বাজার কপাট সেতু থেকে সাবেক কাউন্সিলর কাজলের বাড়ি পর্যন্ত, উত্তম স্কুল থেকে অন্তরামের দিঘি পর্যন্ত সড়কগুলো।

২৬ মার্চ সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বউ বাজার এলাকা থেকে রামপুরা পর্যন্ত প্রায় সোয়া কিলোমিটার সড়ক খুঁড়ে রাখা হয়েছে। স্থানীয়রা বলেন, কয়েক মাস ধরে কাজ বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন তাঁরা। সড়কটি খুঁড়ে রাখায় তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে এই সড়কে অটোরিকশাসহ সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। মানুষ কোনো রকমে হেঁটে চলাচল করছেন। অথচ এই সড়কের পাশে বিভিন্ন পাড়া–মহল্লায় প্রায় ১০ হাজার পরিবারের বাস।

ভগি এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আগেই রাস্তা ভালো ছিল। এখন রাস্তা খুঁড়ে রাখায় অনেক কষ্ট হচ্ছে চলাচলে।’

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২০ সালের জুন মাসে নগরের বউ বাজার এলাকা থেকে রামপুরা পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের কাজ পায় তমা কনস্ট্রাকশন। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ওই বছরের ডিসেম্বরে। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে কাজ শুরু না করায় পরবর্তী সময়ে কাজের সময় বাড়িয়ে গত বছর জুন পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু সেই সময়ের মধ্যে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করে রাখা ছাড়া আর কোনো কাজ হয়নি। তা–ও আবার গত তিন মাস বন্ধ। কাজ শেষ করার জন্য সিটি করপোরেশন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে।

১৮ নম্বর ওয়ার্ডে কাচারি বাজার ট্রাফিক মোড় এলাকা থেকে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার পর্যন্ত সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে দুই কিলোমিটার সড়কটি পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছে। এ কাজটি করছে তমা কনস্ট্রাকশন। কাজের সময় বাড়ানোর পর গত ডিসেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু ৫০ শতাংশ কাজ এখনো বাকি। স্থানীয় লোকজন বলেন, ১২টি পাড়া–মহল্লার মানুষ সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। অফিসপাড়া এলাকা থেকে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল যাওয়ারও প্রধান সড়ক এটি।

এ সড়কে চলাচলকারী শহরে কেরানীপাড়ার বাসিন্দা শিক্ষক শফিয়ার রহমান বলেন, ‘এই রাস্তা দিয়ে হাঁটাচলা কত কষ্টের, তা রিকশায় উঠলে বোঝা যায়। বসে থাকা যায় না।’

সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার থেকে মুন্সিপাড়া কেরামতিয়া স্কুল পর্যন্ত রাস্তা খুঁড়ে খোয়া বিছিয়ে রাখা হয়েছে। সড়কের ওপর নির্মাণসামগ্রীও রাখা হয়েছে। ধুলার কারণে এ সড়ক দিয়ে চলাচল করা দায়। আর বাকি এক কিলোমিটার অংশ অর্থাৎ স্কুল মোড় থেকে কাচারি বাজার পর্যন্ত কাজ এখনো কাজ শুরু হয়নি। এ কাজটিও করছে তমা কনস্ট্রাকশন।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশনের প্রকল্প কো-অর্ডিনেটর প্রকৌশলী এ টি এম রাসেল বলেন, নির্মাণসামগ্রীর দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় কাজে ধীরগতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে খুব শিগগির নির্মাণকাজ শেষ হবে।

সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আজম আলী বলেন, এক দফা থেকে দুই দফা কাজের মেয়াদ বাড়ানো হলেও ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কাজ হয়েছে। এই জুনের মধ্যে সব কাজ শেষ করতে না পারলে টাকা ফেরত যেতে পারে। কাজ শেষ করার জন্য কয়েক দফা চিঠি দেওয়া হয়েছে।