কানাইঘাটে আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় আহত ১৫

আওয়ামী লীগের হামলার পরে সিলেটের কানাইঘাট বাজারে দুপুরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা হাতে বিক্ষোভ করেন
ছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত

সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আজ সোমবার দুপুরে কানাইঘাট পৌর শহরে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে তেল-গ্যাসসহ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে কানাইঘাট উপজেলা ও পৌর বিএনপি যৌথভাবে বেলা ১টার দিকে পৌর শহরের পূর্ব বাজার থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এর কয়েক মিনিট পর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অন্তত ৫০ জন নেতা-কর্মী লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে বিএনপির মিছিলে হামলা চালান। হামলায় বিএনপির ১০ জন নেতা-কর্মী আহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, বিএনপির নেতা-কর্মীরা পরবর্তী সময়ে সংঘবদ্ধ হয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেন। এরপর বিএনপি পুনরায় পৌর শহরে প্রতিবাদ মিছিল করে তাদের কর্মসূচি শেষ করে। বিএনপির কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে বেলা তিনটার দিকে পৌর শহরের পূর্ব বাজারে অবস্থিত বিএনপির কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন। কার্যালয়ে ভাঙচুরের খবর পেয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুনরায় জড়ো হয়ে লাঠিসোঁটা ও বাঁশ নিয়ে পৌর শহরে প্রতিবাদ মিছিল করেন।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক খছরুজ্জামান, পৌর বিএনপির নেতা আশরাফ আহমদ ও এখলাছুর রহমান, যুবদল নেতা খাইয়রুল ইসলাম, ছাত্রদল নেতা আনোয়ার হোসেন, ছাইফুর রহমান ও ফাহিম আহমদ আছেন। অন্যদিকে ছাত্রলীগের অন্তত ৫ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।

জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন বলেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিলে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়ে অনেকের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছেন। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজি শরিফুল হক অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো ধরনের উসকানি ছাড়া বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা চালিয়েছে। পরে বিএনপি ও সাধারণ মানুষের ধাওয়ায় তারা বিদায় নেয়। এরপর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর করেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. লুৎফুর রহমান বলেন, ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী পৌর শহরের পূর্ব বাজার দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তখন বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাঁদের ওপর হামলা করে আহত করেন। খবর পেয়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা পাল্টা ধাওয়া দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাজারছাড়া করেছেন। এতে বিএনপির কেউ আহত হননি, এমনকি তাঁদের কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেনি।

কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি ও ছাত্রলীগের দুটো মিছিল মুখোমুখি হওয়ায় উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। উভয় পক্ষ ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলের পাশে থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে উভয় পক্ষকে সরিয়ে দেয়। তবে এতে কেউ আহত হননি। পরিস্থিতি এখন শান্ত।

এদিকে কানাইঘাটে বিএনপি নেতার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাটসহ বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা চালানোর অভিযোগ এনে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক মো. তাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দমন-পীড়ন চালিয়ে জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ ও বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর ক্রমাগত জুলুম নির্যাতন, গুম, খুন, অপহরণের যে হিড়িক চলছে তাতে দেশের মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত। এ ধরনের সহিংস জুলুম ও রক্তপাতের বিরুদ্ধে দেশের মানুষের ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প পথ নেই। বিএনপির মহাসচিব কানাইঘাটে বিএনপির কর্মসূচিতে হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

একইভাবে হামলার ঘটনায় নিন্দা ও দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে জেলা বিএনপি।