কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন : ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড
কারখানার বর্জ্যে যত সমস্যা
যিনি বর্জ্য অপসারণে কাজ করবেন, তাঁকেই নির্বাচনে ভোটাররাা ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন।
২০১৫ সালের ২৫ মে কুমিল্লা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) প্রায় ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে কেন্দ্রীয় তরল বর্জ্য পরিশোধনাগার স্থাপন করা হয়। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা ভেবেছিলেন, এবার কেন্দ্রীয়ভাবে কুমিল্লা ইপিজেডের শিল্পকারখানার তরল বর্জ্য পরিশোধন সম্ভব হবে। ইপিজেডের আশপাশের পরিবেশ আর ব্যাহত হবে না। কৃষিজমি ও নানা প্রজাতির দেশি মাছ বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে। বৃক্ষরাজি সবুজে ভরে থাকবে।
বিধিবাম। বছর না যেতেই কারখানার বর্জ্যে আশপাশের এলাকার ফসলি জমিতে আগের মতো ধান হচ্ছে না। সবজিখেতেও ফলন কম হচ্ছে। দেশি মাছের বিলুপ্তি হচ্ছে। নলকূপ থেকে ময়লা পানি বের হচ্ছে। দুর্গন্ধযুক্ত পচা ও ময়লা পানিতে ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। খাল ও পুকুরে কালো পানি জমে আছে। কেমিক্যালে গাছ মরে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সর্বশেষ গত ২৫ এপ্রিল ইপিজেড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সদ্য বিদায়ী মেয়র মো. মনিরুল হক, ইপিজেড এলাকার কুমিল্লার উন্নয়নবান্ধব নেতা সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল হক চৌধুরী, পরিবেশ অধিদপ্তর ও আন্দোলনরত সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সভা হয়। সভায় ইপিজেডের তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।
ওই তিন ওয়ার্ডের অন্তত ২৪ জন ভোটারের সঙ্গে তিন দিন ধরে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা সবাই ইপিজেডের তরল বর্জ্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। যিনি তরল বর্জ্য অপসারণে কাজ করবেন, তাঁকে আগামী ১৫ জুন অনুষ্ঠিতব্য কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তাঁরা ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন।
ইপিজেড সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালের মার্চে ২৬৭ দশমিক ৪৬ একর জায়গা নিয়ে কুমিল্লা ইপিজেড প্রকল্প অনুমোদন হয়। ২০০০ সালের ১৫ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইপিজেডের উদ্বোধন করেন।এই ইপিজেডে বিদেশি, দেশি ও দেশি-বিদেশি যৌথ মালিকানাধীন ৪৫টি কারখানা চালু আছে। এতে ৩৫ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। ২০১১ সালের ১৩ ডিসেম্বর ইপিজেডের দক্ষিণ পাশে বর্জ্য পরিশোধনাগার স্থাপন করার কাজ শুরু হয়। ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর ওই কাজ শেষ হয়। মেসার্স সিগমা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৩৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করে। বর্জ্য পরিশোধনাগারটি রাসায়নিক ও জৈবিক উভয় পদ্ধতিতে প্রতিদিন অন্তত ১৫ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য পরিশোধন করতে পারে। এটি ২৪ ঘণ্টা চালু থাকে।
২০১৫ সালের ২৫ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় তরল বর্জ্য পরিশোধনাগার উদ্বোধন করেন।
১৯ নম্বর ওয়ার্ড
রাজাপাড়া, নেউরা, ঢুলিপাড়া (সৈয়দপুর) ও রসুলপুর এলাকা নিয়ে ১৯ নম্বর ওয়ার্ড। কুমিল্লা ইপিজেডের পূর্ব পাশে এই ওয়ার্ডের অবস্থান। এখানকার বেশির ভাগ ফসলি জমিতে ও পুকুরে ইপিজেডের তরল বর্জ্য রয়েছে।
স্থানীয় ভোটার ও সামাজিক সংগঠনের পথিকৃত কুমিল্লার সভাপতি শহীদুল হক বলেন, ‘ইপিজেডের বর্জ্যে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত। তার ওপর এলাকার ভূঁইয়া পুকুরপাড়ের ২০০ বছরের পুরোনো মসজিদ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা।’
এখানে ভোটার ৬ হাজার ৪৪১। এই ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন টানা দুবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর মো. জাকির হোসেন। আরও প্রার্থী রয়েছেন নাজমুল হাসান চৌধুরী, মো. জুয়েল, আলমগীর রহমান, মোজাম্মেল হোসাইন ও মো. রেজাউল করিম।
২০ নম্বর ওয়ার্ড
দিশাবন্দ, উনাইসার, লক্ষ্মীনগর, ইপিজেডের দক্ষিণ ও পশ্চিম এলাকার কিছু অংশ নিয়ে এই ওয়ার্ড। কুমিল্লা বিমানবন্দর, আবহাওয়া অফিস, সেনাবাহিনীর ডেইরি ফার্ম এই এলাকায় অবস্থিত। এই এলাকার লাগোয়া তরল বর্জ্য পরিশোধনাগারটি।
সদ্য বিদায়ী কাউন্সিলর মো. ছিদ্দিকুর রহমান এবার নির্বাচন করছেন না। তিনি বলেন, ‘আমাদের দুঃখ কুমিল্লা ইপিজেডের তরল বর্জ্য।’
এখানে ভোটার সংখ্যা ৬ হাজার ৯২৬ জন। এখানে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন তিনজন। তাঁরা হলেন মো. হারুনুর রশিদ, মো. মাহে আলম ও আনোয়ার হোসেন।
২১ নম্বর ওয়ার্ড
আশ্রাফপুর ও শাকতলা এলাকা এবং ইপিজেডের পশ্চিম ও উত্তর পাশের কিছু এলাকা নিয়ে এই ওয়ার্ডের অবস্থান। এই ওয়ার্ডের মধ্যে কান্দি খাল। এই খালের পানি পচা ও গন্ধযুক্ত। এই এলাকা দিয়ে কুমিল্লার দক্ষিণ এলাকার বাসিন্দারা যাতায়াত করেন। এখানে রয়েছে জাঙ্গালিয়া (আশ্রাফপুর) কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল। এখানে যানজট আছে।
এই এলাকার ভোটার বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কুমিল্লা জেলা শাখার কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিউল আহমেদ বাবুল বলেন, ইপিজেডের তরল বর্জ্য জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে। যানজট ও জলাবদ্ধতাও আছে।
এখানে ভোটার ১২ হাজার ২৩৮ জন। এখানে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হচ্ছেন কাজী মাহবুবুর রহমান, মো. গোলাম মোস্তফা মজুমদার, মো. জামাল হোসেন, মো. মাহবুবুর রশিদ, মো. মিন্টু ও আক্তার হোসেন।