কারাবন্দী বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতার পোস্ট ‘আবার আসব ফিরে...’
বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফ একটি হত্যা মামলায় আত্মসমর্পণের পর এখন কারাগারে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাঁর ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে গতকাল সোমবার রাত ১০টার দিকে পোস্ট করা হয়, ‘আবার আসব ফিরে। সত্যের জয় হবে একদিন...’।
রউফের ওই পোস্টে অনেকেই মন্তব্য করেন। কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি আবদুর রাজ্জাক মন্তব্য করেন, ‘তুই কই’। সেখানে রেজওয়ান আহমেদ নামের একজন আবদুর রাজ্জাককে মেনশন করে লেখেন, ‘ভাই আজ কোর্টে স্যারেন্ডার করেছে।’
জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক তাকবীর ইসলাম খান হত্যার প্রধান আসামি আবদুর রউফ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন গতকাল বিকেলে। এর কয়েক ঘণ্টা পর তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ওই পোস্ট করা হয়। এতে রউফের একটি ছবিও সংযুক্ত করা। আবদুর রউফের ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা কয়েকজন জানিয়েছেন, পোস্ট দেওয়ার পর আরও ঘণ্টাখানেক আবদুর রউফকে মেসেঞ্জারে সক্রিয় দেখায়। রাত ১১টার পর তাঁকে মেসেঞ্জারে দেখা যায়নি।
বগুড়া আদালত পুলিশের পরিদর্শক সুব্রত চ্যাটার্জি জানান, গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে অন্য আসামির সঙ্গে রউফকেও বগুড়া জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। রাত ১০টার দিকে রউফ কারাগারেই ছিলেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বগুড়া সদর থানার উপপরিদর্শক আবদুল মালেক বলেন, রউফের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট সচল মানে তিনি হয়তো কারাগারেই মুঠোফোন ব্যবহার করছেন অথবা তাঁর ফেসবুকের পাসওয়ার্ড অন্য কারও কাছে আছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বগুড়া সাইবার পুলিশের পরিদর্শক এমরান মাহমুদ বলেন, কারাগারে থাকা হত্যা মামলার আসামির ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার পর অনেকেই স্ক্রিনশট পাঠিয়ে জানতে চেয়েছেন আসলেই কারাগারে বসে ফেসবুক ব্যবহার করা হচ্ছে কি না। প্রযুক্তির সহায়তায় তাঁরা বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে আজ মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বগুড়া কারাগারের জেলার এস এম মহিউদ্দিন হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে জ্যামার রয়েছে। ভেতরে ইন্টারনেটের সংযোগও ধীরগতির। কোনো আসামিকে কারাগারে নেওয়ার সময় শরীর তল্লাশি করা হয়। করোনার কারণে ফটকের কাছেই গোসল করিয়ে পুরোনো কাপড় বাইরে রেখে ভেতরে নেওয়া হয়।
মহিউদ্দিন হায়দার বলেন, ব্যাগ তল্লাশি করে পরে কয়েদির কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। কাজেই কারাগারে বসে মুঠোফোনে ফেসবুক চালানো অসম্ভব ব্যাপার। রউফের ফেসবুক সচল থাকার বিষয়টি রাতেই তিনি জেনেছেন।
গত ১১ মার্চ ধুনট উপজেলায় ছাত্রলীগের সমাবেশে যাওয়ার পথে জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক তাকবীর ইসলাম খানের মোটরসাইকেলে ধাক্কা লাগে সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফের মোটরসাইকেলের। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডার জেরে ওই দিন সন্ধ্যায় শহরের সাতমাথায় তাকবীরের ওপর হামলা হয়।
১৬ মার্চ চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যান তাকবীর। মারা যাওয়ার আগে একটি ভিডিও বার্তায় তাকবীর বলে যান, সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফ নিজেই চাপাতি দিয়ে তাঁকে আঘাত করেছেন।
হত্যাকাণ্ডের চার মাস পর গতকাল বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন রউফ। বিচারক তা নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।