চেষ্টা করেও কার্ড পাননি সাদিয়া বেগম। সেই কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। গতকাল দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

সাদিয়া বেগম আগেও লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির পণ্য কিনেছেন। কয়েক ঘণ্টা দাঁড়াতে হলেও হাতে পেয়েছেন পণ্য। কিন্তু এখন পরিস্থিত ভিন্ন। পারিবারিক কার্ড ছাড়া তেল, চিনি, ডাল মিলছে না। কার্ড পেতে ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় ও মহল্লা কমিটির নেতাদের দুয়ারে ছুটে গেছেন। কারও কাছে সদুত্তর পাননি। সাদিয়া বেগমের প্রশ্ন, কার কাছে গেলে কার্ড পাবেন তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের মেয়র গলির টিঅ্যান্ডটি কলোনির মাঠে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। পরিচিত এক ব্যক্তি তাঁকে বলেছেন, লাইনে দাঁড়ালে কার্ড পাবেন। তিনি আধা ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানোর পর জানতে পারেন, কার্ড পাবেন না।

পঞ্চাশোর্ধ্ব সাদিয়া বেগম ২০ বছর আগে স্বামীর সঙ্গে নোয়াখালী থেকে চট্টগ্রাম শহরে আসেন। তখন থেকেই থাকেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেয়র গলি এলাকায়। বছর দশেক আগে স্বামী ছেড়ে চলে গেছেন। ছেলের বয়স তখন ১০ বছর। এখন মা-ছেলের সংসার। ছেলে একটি দোকানের কর্মচারী। মাসে বেতন চার হাজার টাকা। ছেলের আয়ের ওপর চলে সংসার। তিনিও একটি ভবনের ঝাড়ুদারের কাজ করেন। বিনিময়ে ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে থাকার সুযোগ পেয়েছেন। ভাড়া দিতে হয় না।

কথায় কথায় গত এক সপ্তাহের খাবারের তালিকা বললেন তিনি। সাদিয়া বেগম বলেন, গতকাল সকালে শাক রান্না করে এসেছেন। তার আগের দিন অর্থাৎ বুধবার ভাত খেয়েছেন বেগুন ভাজা দিয়ে। মঙ্গলবার ডিম ভাজি আর মসুর ডাল। এসব কথা বলতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। বলেন, বছরে এক–দুবার গরুর মাংস জোটে পাতে, তা–ও ঈদের সময়।

একটু থেমে আবার বলা শুরু করেন সাদিয়া বেগম। আর চোখ মোছেন বারবার। বলেন, ‘বাজারে সবকিছুর দাম বাড়তি। কিছু টাকা বাঁচাতে টিসিবির পণ্য কিনতাম। এখন সেটিও সম্ভব হচ্ছে না।’

অবশ্য সাদিয়া বেগম একা নন, তাঁর মতো ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আরও অর্ধশতাধিক ব্যক্তি কার্ডের খোঁজে এসেছিলেন। কাউকে মহল্লা কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে, আবার কাউকে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিক্রয়কর্মীরা।

জানতে চাইলে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মোরশেদ আলম বলেন, এ ওয়ার্ডের জনসংখ্যা পাঁচ লাখের বেশি। কিন্তু কার্ড দেওয়া হয়েছে পাঁচ হাজার। আরও তিন হাজার কার্ডের জন্য আবেদন করা হয়েছে। এ কারণে সবাই কার্ড পাননি।

এদিকে গতকালও পণ্য বিক্রিতে বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। একজন একাধিক কার্ড এনে পণ্য নিয়ে গেছেন। আবার অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়েও পণ্য পাননি। এ ছাড়া কোন স্থানে বিক্রি হচ্ছে, তা না জানায়ও বিপাকে পড়েন ক্রেতারা।

এমনই একজন ময়ফুল বেগম। তিনি রুবি গেট থেকে প্রথমে আসেন ২ নম্বর গেট এলাকায়। সেখানে পণ্য পাননি। কয়েকজনের কাছে শোনেন, পণ্য বিক্রি হচ্ছে সিঅ্যান্ডবি কলোনির মাঠে। সে মাঠে গিয়েও পাননি। পরে চলে যান টিঅ্যান্ডটি কলোনির মাঠে। তবে পৌঁছাতে পৌঁছাতেই পণ্য শেষ হয়ে যায়। তিনি ফিরে যান খালি হাতে।

সরেজমিন দেখতে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত টিঅ্যান্ডটি কলোনির মাঠে ছিলেন এ প্রতিবেদক। দেখা গেছে, শতাধিক মানুষ পণ্য না পেয়ে ফিরে গেছেন। যাওয়ার সময় তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

বিক্রয়কর্মীরা জানান, মাত্র ৫০০ কার্ডের জন্য পণ্য দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মানুষ এসেছে হাজারের বেশি। যাঁরা আগে এসেছেন, তাঁদের দেওয়া হয়েছে।