কুমারখালীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাইয়ে অনিয়মের অভিযোগ
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই–বাছাইয়ে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। আজ সোমবার সকালে উপজেলা পরিষদ চত্বরে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করা হয়। এ কর্মসূচির আয়োজন করেন মুক্তিযোদ্ধা যাচাই–বাছাই কমিটির সুপারিশ করা ‘গ’ তালিকাভুক্ত ব্যক্তিরা।
সংবাদ সম্মেলনে ‘গ’ তালিকাভুক্ত ৩৬ জনের মধ্যে ১০ জনের স্বাক্ষর করা লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা দাবিকারী মাহমুদ হোসেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, কুমারখালীতে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই–বাছাইয়ে প্রজ্ঞাপন–বহির্ভূত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার পক্ষের সাক্ষী উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও তাঁদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়নি। সপক্ষের সাক্ষীদের লিখিত সাক্ষ্য ও স্বাক্ষর মূল্যায়ন করা হয়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিজে দায়িত্ব পালন না করে সমাজসেবা কর্মকর্তাকে দিয়ে দায়িত্ব পালন করিয়েছেন। এতে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা বাদ পড়েছেন এবং যাচাই–বাছাই প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, যাচাই–বাছাইয়ে যুদ্ধকালীন তথ্য–উপাত্ত আমলে না নিয়ে অসম্পূর্ণ ও ত্রুটিযুক্ত ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এখানে গেজেট, মুক্তিযোদ্ধা নম্বর, নাম, জন্ম তারিখ, মা–বাবার নাম ইত্যাদি ভুল রয়েছে। এভাবে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানহানি করা হয়েছে।
আগের যাচাই–বাছাই কমিটির ‘ক’ তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ‘গ’ তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ফলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই–বাছাইয়ের কার্যক্রম ব্যর্থ হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলন আয়োজকদের দাবি—এই কমিটির ফল বাতিল করে প্রজ্ঞাপন অনুসারে যাচাই–বাছাইয়ের জন্য নতুন করে কমিটি গঠন এবং সঠিকভাবে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই–বাছাই করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধা দাবিকারী আবদুল বারী, গনি উদ্দিন, সরদার আবদুল খালেক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্য পাঠ শেষে কী ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে? এমন প্রশ্ন করা হলে মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘শুনেছি টাকার বিনিময়ে ও স্বজনপ্রীতি করে তালিকা করা হয়েছে। তবে আমাদের কাছে কোনো টাকা–পয়সা কেউ চাননি। আমরা কাউকে কিছু দিইনি।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই–বাছাইয়ে অনিয়ম হওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও এবং যাচাই-বাছাই কমিটির আহ্বায়ক বিতান কুমার মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই–বাছাইয়ে কোনো অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি হয়নি। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) নির্দেশনা অনুযায়ী যাচাই–বাছাই করা হয়েছে। তবুও কারও সন্দেহ হলে তাঁদের আপিল করার সুযোগ আছে। আর যাচাই–বাছাই কমিটিতে সমাজসেবা অফিসার ছিলেন না। তিনি শুধু নথিপত্র সংরক্ষণ ও সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিলেন।
গত রোববার সকালে উপজেলায় জামুকার সুপারিশবিহীন বেসামরিক গেজেটের ২১০ জন মুক্তিযোদ্ধা যাচাই–বাছাইয়ের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বসম্মতিক্রমে ‘ক’ তালিকায় ১৪৬ জন, দ্বিধাবিভক্ত ১ জন ‘খ’ তালিকায় এবং সর্বসম্মতিক্রমে নামঞ্জুর হওয়া ৩৬ জন ‘গ’ তালিকায় আছেন। এ ছাড়া একাধিক তালিকায় (ভারতীয় তালিকা, লাল মুক্তিবার্তা, সেনাবাহিনী গেজেট, শহীদ গেজেট, ন্যাপ ও বিজিবি গেজেট) রয়েছেন ২৭ জন।