চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় কুমার নদের ১৩ কিলোমিটার অংশে বাঁধ দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা অবৈধভাবে মাছ চাষ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যে সমবায় সমিতির নামে মাছ চাষ চলছে, সেটির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। এমনকি ছয় মাস ধরে নদের ওই অংশে মাছ চাষের বন্দোবস্তও বাতিল করা হয়েছে। জেলা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি, জেলা নদী রক্ষা কমিটি ও আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রশাসন বাঁধ উচ্ছেদে দফায় দফায় সিদ্ধান্ত নিয়েও তা কার্যকর করতে পারেনি।

স্থানীয় লোকজন বলেন, যে দলই ক্ষমতায় আসে, সে দলের নেতারা কুমার নদের ওই অংশটি দখলে নিয়ে মাছের চাষ করেন। প্রবহমান নদের ওই অংশটুকু বদ্ধ জলাশয় দেখানো হয়। এভাবে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে বন্দোবস্ত নিয়ে ২০০১ সাল থেকে টানা আট বছর বিএনপির স্থানীয় নেতারা মাছ চাষ করেন। এরপর থেকে নদের ওই অংশে মাছ চাষ করছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা।

নদে মাছ চাষ চলছে বকসিপুর-আসাননগর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে। সমিতির নেতৃত্বে আছেন আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আতিয়ার রহমান ও ডাউকী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান। আতিয়ার সমিতির সভাপতি আর আনিসুর সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন।

কুমার নদের ওই অংশে মাছ চাষের বন্দোবস্ত গত ১৩ এপ্রিল বাতিল করেছে জেলা প্রশাসন। সে হিসেবে নদে মাছ চাষ বন্ধ থাকার কথা। কিন্তু নদে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ অব্যাহত রেখেছে বকসিপুর-আসাননগর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে গত ৩০ জুন এই সমিতির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা সমবায় কর্মকর্তা এফ এম সেলিম আখতার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমার নদকে বদ্ধ জলাশয়ে দেখানোর প্রক্রিয়া শুরু হয় বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের মেয়াদকালে (২০০১-২০০৬)। ওই সময় সংঘবদ্ধ একটি চক্র আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার হাউসপুর থেকে বকসিপুর হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে নদের সচল এক-তৃতীয়াংশ বা ১৩ কিলোমিটার এলাকাকে বদ্ধ জলাশয় দেখায়। চক্রটি ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে এ–সংক্রান্ত কাগজপত্রও তৈরি করে আনে। এরপর জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে বদ্ধ জলাশয় হিসেবে বন্দোবস্ত নিয়ে বিএনপির স্থানীয় কয়েকজন নেতা মাছ চাষ শুরু করেন।

২০০৮ সালের ডিসেম্বরে সরকার পরিবর্তন হলে বকসিপুর-আসাননগর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির পরিচয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা নদের ওই অংশ নিজেদের দখলে নেন। এরপর ২০০৯ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে বন্দোবস্ত নিয়ে টানা মাছ চাষ শুরু করেন।

আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আতিয়ার রহমান মুঠোফোনে জানান, সরকারি নিয়ম মেনেই নদের ওই অংশ বন্দোবস্ত নিয়ে ২০০৯ সাল থেকে তাঁরা মাছ চাষ শুরু করেন। গত ১৩ এপ্রিল যার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এখন তাঁরা কীভাবে মাছ চাষ করছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে আতিয়ার বলেন, ‘বন্দোবস্তের মেয়াদ শেষ হলেও নদে আমাদের চাষ করা অন্তত ২৫ লাখ টাকার মাছ রয়েছে। পানি না শুকালে ধরা যাবে না। এ জন্য প্রশাসনের কাছে সময় চাওয়া হয়েছে।’

গত ২৫ জুলাই জেলা নদী রক্ষা কমিটির সভায় জেলার সব নদ-নদী থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ৮ আগস্ট জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা ও ৬ সেপ্টেম্বর আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রশাসনের সভায় কুমার নদকে দখলমুক্ত করতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও বাস্তবায়ন হয়নি।

জেলা প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম সরকার প্রথম আলোকে জানান, এই নদকে দখলমুক্ত করতে আলমডাঙ্গার ইউএনও রনি আলম নূর ও পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ আহমেদকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

আরিফ আহমেদ জানান, জেলা নদী রক্ষা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সম্প্রতি নবগঙ্গা নদের বুক থেকে অবৈধ বাঁধ উচ্ছেদ করা হয়েছে। প্রশাসনের সহযোগিতায় শিগগির কুমার নদেও উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।