কুমিল্লায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন, দোষীদের বিচার চায় ঢাবি শিক্ষক সমিতি
কুমিল্লার নানুয়া দিঘিরপাড়ের পূজামণ্ডপ ও ঠাকুরপাড়া রক্ষাময়ী কালীমন্দির এলাকা পরিদর্শন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতির প্রতিনিধিদল। তাঁরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় জড়িত দোষীদের শাস্তি দাবি করেছেন। আজ সোমবার দুপুর ১২টায় শিক্ষক সমিতির ২০ সদস্যের প্রতিনিধিদল প্রথমে নানুয়া দিঘিরপাড় এলাকা পরিদর্শন করে। এরপর তাঁরা সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।
দুর্গাপূজা উপলক্ষে কুমিল্লা নগরের নানুয়া দিঘিরপাড়ে দর্পণ সংঘের উদ্যোগে অস্থায়ী পূজামণ্ডপ স্থাপন করা হয়। ১৩ অক্টোবর সেখানে পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে সংঘাত, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষক সমিতির প্রতিনিধিদল প্রতিবাদ ও সংহতি জানাতে কুমিল্লায় আসে।
এই প্রতিনিধিদলে ছিলেন ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. রহমত উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, টেলিভিশন, ফিল্ম ও ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক শফিউল আলম ভূঁইয়া, প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সৌরভ সিকদার, গণিত বিভাগের অধ্যাপক ও শিক্ষক সমিতির সদস্য চন্দ্রনাথ পোদ্দার, শামসুন নাহার হলের প্রাধ্যক্ষ লাফিফা জামাল, সিন্ডিকেট সদস্য আবুল মনসুর আহাম্মদ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস ও শামীম রেজা, সহকারী প্রক্টর নাজিব হোসেন খান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুর রহিম ও মো. হুমায়ুন কবির, অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান, এমআইএস বিভাগের অধ্যাপক কে এম সালাহউদ্দিন ও মো. আকরাম হোসেন, আইন বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম আশরাফুজ্জামান, ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি ও ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুল মুহিত, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাজমুন নাহার, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ইসতিয়াক, ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মুশফিক মান্নান চৌধুরী ও অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিয়া রহমান।
সমাবেশে শিক্ষক নেতারা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তাঁরা এই ঘটনার প্রতিবাদে আগামীকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে মানববন্ধন করবেন। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেবেন। সমাবেশে শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. রহমত উল্লাহ বলেন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে এই নারকীয় তাণ্ডব মেনে নেওয়া যায় না। ঘটনার সঙ্গে যারা যেভাবে জড়িত হোক না কেন, তাঁদের শাস্তি দিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা হিন্দু নয়, মুসলিমও নয়। তারা মানবতাহীন। শামসুন নাহার হলের প্রাধ্যক্ষ লাফিফা জামাল বলেন, ‘এটি অত্যন্ত পীড়াদায়ক ঘটনা। আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাই।’ রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, সংঘাত সৃষ্টির জন্য কোরআন অবমাননার ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘এ ঘটনায় মানসিকভাবে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছি আমরা। এটা বাঙালির আত্মপরিচয়ের ওপর আঘাত।’ চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, ‘এটা জল্লাদের বাংলাদেশ নয়। এটা বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার বাংলাদেশ। রামু, নাসিরনগর হয়ে কুমিল্লার ঘটনা কোনোভাবেই মানতে পারছি না।’
পরে প্রতিনিধিদল নগরের ঠাকুরপাড়া এলাকার রক্ষাময়ী কালীমন্দির এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে। পরে তাঁরা নোয়াখালীর চৌমুহনীর উদ্দেশে রওনা হন।