কুষ্টিয়ার মিলমালিকেরা বললেন, চালের দাম বাড়ছে ধানের মজুতদারদের কারণে
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে গত এক মাসে কয়েক দফায় কেজিপ্রতি অন্তত আট টাকা করে চালের দাম বেড়েছে। এ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। যার প্রভাব পড়ছে সংসার খরচে। টাস্কফোর্স গিয়ে মোকামে অভিযান চালাচ্ছে। সেখান থেকে ফিরে বাজারেও দিচ্ছেন হানা। অসংগতি পাওয়ার পর জরিমানা করা হচ্ছে। এত কিছুর পরও মিনিকেট চালের দাম কমছে না।
খাজানগর থেকে কুষ্টিয়া পৌর বাজারের দূরত্ব মাত্র ১২ কিলোমিটার। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় পৌরবাজারের মা স্টোরের মালিক আহম্মদ মনজুরুল হক তাঁর দোকানে টাঙানো মূল্যতালিকায় উল্লেখ করেছেন, অটোরাইস মিল থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে মিনিকেট চাল কিনেছেন। বিক্রি করছেন ৭৭ টাকায়। যে চাল এক মাস আগে ছিল কেজি প্রতি ৫৬ টাকা দর, সেটি বিক্রি করেছেন ৫৮ টাকায়। বোরোর ভরা মৌসুমে মাত্র এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৮ থেকে ৯ টাকা করে।
খাজানগর এলাকায় অন্তত ৫০০ চালকল রয়েছে। এর মধ্যে ৫২টি অটোরাইস মিল। ওই অটোরাইস মিলগুলোর মধ্যে অন্তত ৩৮টি অটোরাইস মিল নিজেরা কোনো চাল উৎপাদন করে না। বাইরের বিভিন্ন চাল কিনে বস্তায় ভরে বেশি দামে বিক্রি করে তারা।
দেশের অন্তত ছয়টি গ্রুপ কোম্পানি বেশি টাকা দিয়ে ধান কিনে মজুত করেছে। তারাই চাল উৎপাদন করে ব্যবসা করছে। এতেই দাম বাড়ছে।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানিয়েছেন ফ্রেশ অ্যাগ্রো ফুডের মালিক ওমর ফারুক। বাজারে চালের দাম বাড়ার বিষয়ে আজ সকাল ১০টার দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এই বৈঠকে কুষ্টিয়ার মিলমালিকেরা অংশ নেন। বাজারে চালের দাম কেন বাড়ছে, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন তাঁরা।
চালের দাম বাড়া নিয়ে মিলমালিকেরা বৈঠকে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তাঁরা বলেন, ধানের এমন ভরা মৌসুমে এভাবে মূল্যবৃদ্ধি কখনো তাঁরা দেখেননি। তাঁরা চালের দাম বাড়ার পেছনে ধানের চড়া দামকে দায়ী করছেন। যুক্তি দেখান, দেশের অন্তত ছয়টি গ্রুপ কোম্পানি বেশি টাকা দিয়ে ধান কিনে মজুত করেছে। তারাই চাল উৎপাদন করে ব্যবসা করছে। এতেই দাম বাড়ছে।
বৈঠকে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিলমালিক সমিতি কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রধান বলেন, ধান কৃষক ও মিলারদের কাছে নেই; যা মজুত আছে সব আড়তদারের কাছে। তাঁরা ধানের দাম বাড়াচ্ছেন। সেখানে তদারকির অভাব রয়েছে।
দেশ অ্যাগ্রো ফুডের মালিক আবদুল খালেক বলেন, দেশের ছয়টি গ্রুপ চালের ব্যবসা করছে। তারা বস্তা বস্তা টাকা নিয়ে ধান কিনে রাখছে। গ্রুপগুলোর ওপর তদারকি বাড়ান, কালকেই দাম কমে যাবে।
গত মঙ্গল ও বুধবার খাজানগর এলাকায় জেলা প্রশাসন ও খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় অভিযান চালায়। দুটি মিলকে জরিমানা করে। ধান-চালের মজুতের বিষয়ে তথ্য নেয়।
বৈঠকে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী বলেন, দুই দিনের অভিযানে কোনো মিলে ধান চালের অতিরিক্ত মজুত এবং দামের অসামঞ্জস্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জেলা সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা আবদুস সালাম তরফদার বলেন, অভিযানে গিয়ে নির্দিষ্ট গুদাম পাওয়া যায় না। এটা একটা নিয়মের মধ্যে আনতে হবে।
সব মিলমালিকদের নির্দেশনা দিয়ে সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, আজ থেকে প্রত্যেক মিলমালিক তাঁরা কোথায় কার কাছ থেকে কী পরিমাণ কবে ধান কিনছেন, সেই তথ্য জানাবেন। একই সঙ্গে প্রতিদিন কী পরিমাণ চাল উৎপাদন করছেন, কী পরিমাণ কোথায় কার কাছে বিক্রি করছেন, সেই তথ্যও দিতে হবে। প্রতিদিনের তথ্য প্রতিদিনই জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে দিতে হবে।
দুই ঘণ্টা পর বৈঠক শেষ হয়। তবে চালের দাম কমবে কি না, সে ব্যাপারে জোরালো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।