কুয়েট শিক্ষক সেলিমের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিল কমিটি
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক মো. সেলিম হোসেনের (৩৮) মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে তদন্ত কমিটির প্রধান কুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের অধ্যাপক মহিউদ্দিন আহমাদসহ পাঁচ সদস্য উপাচার্যের কার্যালয়ে ৪৮ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনটি জমা দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. আনিছুর রহমান ভূঞা প্রথম আলোকে বলেন, কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তবে প্রতিবেদনে কী আছে, এখনো তাঁরা পড়ে দেখেননি। প্রতিবেদন নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত কী নেওয়া হবে, সে বিষয়ে আলোচনা চলছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান ইইই বিভাগের অধ্যাপক মহিউদ্দিন আহমাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রতিবেদন দিয়েছি। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রতিবেদন গ্রহণ করেছেন। প্রতিবেদনে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সুপারিশও দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রভাবমুক্ত হয়েই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পেরেছি। শিক্ষক, কর্মকর্তা–কর্মচারী, শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমরা ডেকেছি। সবার সবকিছু শোনা এবং তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করেছি। ঘটনায় কে কীভাবে দায়ী বা কে দায়ী না, এসব বলার এখতিয়ার আমাদের নেই। তবে প্রতিবেদনে সবটাই আছে।’
গত ৩০ নভেম্বর ইইই বিভাগের অধ্যাপক ও লালন শাহ হলের প্রাধ্যক্ষ সেলিম হোসেন ক্যাম্পাসের কাছের ভাড়া বাসায় মারা যান। অভিযোগ ওঠে, মৃত্যুর দিন দুপুরে বাসায় ফেরার পথে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অধ্যাপক সেলিমকে বিভাগে তাঁর কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে তাঁর ওপর মানসিক নিপীড়ন চালানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বলছে, এটি হত্যাকাণ্ড। অধ্যাপক সেলিমের পরিবারও এটিকে হত্যাকাণ্ড বলে অভিযোগ করেছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান বলেন, ‘ঘটনায় কে কীভাবে দায়ী বা কে দায়ী না, এসব বলার এখতিয়ার আমাদের নেই। তবে প্রতিবেদনে সবটাই আছে।’
ওই দিনই এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটির দুজন সদস্য লিখিত ও মৌখিকভাবে তদন্ত করতে অপারগতা জানিয়েছিলেন। এরপর অধ্যাপক সেলিমের আকস্মিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ৩ ডিসেম্বর কুয়েট সিন্ডিকেটে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম ও হলগুলো বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই দিনই বিকেল চারটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ওই দিনই ঘটনার তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি নতুন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। একই সঙ্গে ৩০ নভেম্বর গঠিত প্রথম তদন্ত কমিটি বাতিল করা হয়। দ্বিতীয় তদন্ত কমিটিতে ইইই বিভাগের অধ্যাপক মহিউদ্দিন আহমাদকে সভাপতি ও গণিত বিভাগের অধ্যাপক মো. আলহাজ উদ্দীনকে সদস্যসচিব করা হয়। নতুন কমিটিকে ১০ দিনের মধ্যে সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।
কিন্তু তদন্ত কমিটি ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করতে পারেনি। এ সময় তদন্ত কমিটির সুপারিশ বিবেচনায় নিয়ে সিন্ডিকেট সভায় ক্যাম্পাস বন্ধের সময়সীমা প্রথম দফায় ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। পরে ২৩ ডিসেম্বর রাতে সিন্ডিকেট সভায় ছুটির মেয়াদ আরও এক দফা বাড়ানো হয়। সভায় আগামী ৭ জানুয়ারি হলগুলো খুলে দেওয়া ও ৯ জানুয়ারি ক্লাস শুরু হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
আগের অবস্থানেই আছে শিক্ষক সমিতি
এদিকে ওই শিক্ষকের মারা যাওয়ার ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন, জড়িত ব্যক্তিদের বিচারসহ কয়েকটি দাবিতে শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রতীক চন্দ্র বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘অধ্যাপক সেলিমের মৃত্যুর পর আমরা পাঁচ দফা দাবি করেছিলাম। তার মধ্যে একটা দাবি ছিল সন্দেহভাজন জড়িতদের সাময়িক বহিষ্কার করা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেটা করেছে। আমরা আমাদের আগের অবস্থানে এখনো আছি। আর তদন্ত প্রতিবেদন তো সিলগালা অবস্থায় প্রশাসনের কাছে যাবে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এটিকে শৃঙ্খলা কমিটিতে তোলাসহ কিছু প্রক্রিয়া শেষ করে তারপর সিন্ডিকেটে তুলবে। সিন্ডিকেট থেকে সিদ্ধান্ত হওয়ার পর আমরা সবকিছু জানতে পারব। এরপর আমরা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন থানায় আসেনি
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের খানজাহান আলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহরিয়ার হাসান লাশ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তের জন্য আবেদন করেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কুষ্টিয়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে বলা হয়। ১৪ ডিসেম্বর লাশ উত্তোলন করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ময়নাতদন্ত করা হয়।
খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রবীর কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষকের মৃত্যুর ঘটনায় কোনো মামলা এখনো হয়নি। আর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন তাঁদের হাতে এখনো আসেনি।