কৃষক ও স্কুলছাত্র হত্যার বিচার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে করার দাবি
সিলেটের বিশ্বনাথের চাউলধনী হাওরে কৃষক ও স্কুলছাত্র হত্যার বিচার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে করার দাবি উঠেছে। ‘চাউলধনী হাওর রক্ষা ও কৃষক বাঁচাও আন্দোলন’ নামে স্থানীয় একটি সংগঠন বুধবার দুপুরে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি জানায়।
দুটি হত্যার বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত করার স্বার্থে এই দাবির পাশাপাশি আগামী বোরো মৌসুমের আগে চাউলধনী হাওরের জলমহাল ইজারা বাতিলের আহ্বান জানান সংগঠনটির নেতারা। অন্যথায় হাওরে কৃষক বাঁচাও আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির আহ্বায়ক আবুল কালাম। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির প্রধান উপদেষ্টা ও বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমানসহ হাওর এলাকার কৃষকেরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চাউলধনী হাওর বিশ্বনাথ উপজেলার একটি ফসলি হাওর। স্থানীয় দশঘর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে অবৈধভাবে হাওরের ১৭৮ দশমিক ৯৮ একর আয়তনের জলমহাল ইজারা বন্দোবস্ত নিয়ে সাব-লিজ নেন হাওরপারের ইসলামপুর গ্রামের সাইফুল আলম ও তাঁর কয়েকজন সহযোগী। সাইফুল যুক্তরাজ্যপ্রবাসী হওয়ায় স্থানীয়ভাবে প্রভাব বিস্তার করে ফসলি হাওরের পুরোটা জবরদখল করে রাখেন। জলমহালে মাছ শিকারের নামে কৃষকদের জমি দখল করে ধানি জমির বিনাশ করা হয়। এ অবস্থায় চাউলধনী হাওর রক্ষা ও কৃষক বাঁচাও আন্দোলন দানা বাঁধলে সাইফুল ও তাঁর সহযোগীরা সন্ত্রাসী তৎপরতা শুরু করেন।
গত ২৮ জানুয়ারি চৈতন নগর গ্রামের কৃষক ছরকুম আলী ওরফে দয়াল নামের একজন প্রবীণ কৃষককে হাওরের কৃষিজমিতে কাজ করার সময় পিটিয়ে হত্যার মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসী তৎপরতা শুরু হয় উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কৃষক দয়াল হত্যা ঘটনায় সাইফুলসহ ৩০ জনকে আসামি করে মামলা হয়। এরপর ৪ মে বন্দুক দিয়ে গুলি করে কৃষক বাঁচাও আন্দোলনের এক নেতার ভাতিজা স্কুলছাত্র সুমেল আহমদকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায়ও বিশ্বনাথ থানায় সাইফুলসহ তাঁর সহযোগীদের আসামি করে আরেকটি মামলা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দুই হত্যা মামলার পর থেকে গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন দুটি মামলার আসামি সাইফুলসহ অন্য আসামিরা। সম্প্রতি উচ্চ আদালত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে ছাড়া পেয়ে তাঁরা আবার হাওরে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। এ অবস্থায় সাইফুল ও তাঁর লোকজন মামলা তুলে নিতে নানা কৌশলে বাদীদের চাপ দিচ্ছেন। এ অবস্থায় দুটি হত্যা মামলার দ্রুত বিচারের স্বার্থে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার করার দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলন থেকে আগামী বোরো মৌসুমের আগে জলমহালের ইজারাপ্রথা বাতিল করার দাবি জানানো হয়। এ বিষয়ে চাউলধনী হাওর রক্ষা ও কৃষক বাঁচাও আন্দোলনের প্রধান উপদেষ্টা মুহিবুর রহমান বলেন, কথিত ইজারাদার সাইফুল আলমকে রক্ষায় বিশ্বনাথ থানা থেকে বদলি হওয়া একদল পুলিশ ও অবৈধভাবে জলমহাল ইজারা প্রদান কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারি কর্মকর্তারা জড়িত। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ সংগঠনের দাবি না মানলে চাউলধনী হাওরের কৃষকসহ হাওরপারের মানুষ আন্দোলনের ডাক দেবেন।