কৃষিজমিতে অবৈধ ইটভাটা
আমতলী উপজেলার রায়বালা গ্রামে ইটভাটা চালু করা হচ্ছে। এটি নির্মাণের জন্য লাইসেন্স এবং পরিবেশ ছাড়পত্রও নেওয়া হয়নি।
সরকারি আইন লঙ্ঘন করে বরগুনার আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নে দুই ফসলি জমিতে অবৈধভাবে ইটভাটা গড়ে তোলার কাজ চলছে। ইটভাটাটি চালু হলে ওই এলাকায় পরিবেশ দূষিত হওয়ার পাশাপাশি ফসলের উৎপাদন কমে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন। তাঁরা প্রশাসেনর কাছে দ্রুত ওই ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন,‘আমাদের কাছ থেকে কোনো ইটভাটা নির্মাণে অনুমতি নেওয়া হয়নি। এভাবে যাঁরা যাঁরা নির্মাণ করবেন, তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩–এর ৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে লাইসেন্স না নিয়ে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। এ ছাড়া ওই আইনের আট–এর (১) ধারায় আবাসিক এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ইটভাটা স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এর মধ্যে কৃষিজমিতে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওই আইনের ৪ ও ৮ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করে আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের রায়বালা গ্রামে ১১ একর কৃষিজমির ওপর অবৈধ ইটভাটা গড়ে তোলা হচ্ছে। ওই ইটভাটার নাম আল্লাহর দান ব্রিকস। আমতলী উপজেলার রায়বালা গ্রামের মো. নুরুজ্জামান এটি নির্মাণ করছেন। ওই ইটভাটা স্থাপনের জন্য পরিবেশ ছাড়পত্রও নেওয়া হয়নি।
পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. তোতা মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, আমতলীতে নতুন কোনো ইটভাটা নির্মাণ করার জন্য পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। আমতলীতে
এ ধরনের ছাড়পত্র ছাড়া যদি কোনো ইটভাটা নির্মাণ করা হয় তাহলে ভাটার মালিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের রায়বালা গ্রামে ফসলি জমিতে ইটভাটা গড়ে তোলা হচ্ছে। এই ভাটার ইট পোড়ানোর জন্য ভাটার পাশে জ্বালানি কাঠ স্তূপ করে রাখা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ছত্তার সিকদার বলেন, এই ইটভাটার চারপাশে ধানখেত। নতুন ইটভাটায় ইট পোড়ানোও শুরু হলে ধোঁয়ায় কালো হয়ে উঠবে চারদিক। ইটভাটার চিমনি থেকে নির্গত ওই কালো ধোঁয়ায় এলাকার গাছপালাও মরে যাবে।
আবুল হোসেন চৌকিদার নামের রায়বালা গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘আল্লাহর দান ব্রিকসের মালিক আমার বাবার ৬ একর জমি জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছে। আমরা আদালতে মামলা করলে আদালত ইটভাটা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা দেন। কিন্তু তিনি (ইটভাটার মালিক) তা না মেনে আমাদের জমিতে ইটভাটা গড়ে তুলছেন। আমরা ওই ইটভাটা স্থাপন বন্ধে বিভিন্ন স্থানে গেলেও তাতে কোনো কাজ হয়নি।’
জেলা প্রশাসনের কাজ থেকে লাইসেন্স না নিয়ে অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আল্লাহর দান ব্রিকসের মালিক নুরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন,‘এই ইটভাটা নির্মাণের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো অনুমতিপত্র পাইনি। অনুমতিপত্রের জন্য আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি।’ অন্যের জমি দখল করে ইটভাটা স্থাপন করার অভিযোগের বিষয়ে নুরুজ্জামান বলেন, তিনি কারও জমি দখল করে ইটভাটা স্থাপন করছেন না।
এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ বলেন,‘নতুন করে ইটভাটা নির্মাণের জন্য আমার কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি।’