‘বাবা আমাকে উচ্চশিক্ষিত করতে চেয়েছিল। এখন কোথায় পাব পড়াশোনার খরচ, সংসার চলবে কীভাবে?’ বারবার এমন কথা বলে আহাজারি করছিল দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. হাসান (১৭)। আজ সোমবার সকালে পটুয়াখালীর বাউফল পৌরসভার কলেজপাড়া সড়কের পাশে বাড়িতে সে এই বিলাপ করে যাচ্ছিল। রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় বাবাকে হারিয়ে মুষড়ে পড়েছে ছেলেটি।
হাসানের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তাঁর বাবা আবদুল লতিফ (৪০)। গতকাল রোববার রাতে বাউফল-বগা সড়কের বগা বন্দরের পূর্ব পাশে জ্বালানি তেলবাহী (পেট্রল ও ডিজেল) ট্যাংকারের চাকায় পিষ্ট হয়ে তিনি নিহত হন। আবদুল লতিফ বাউফল পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের কলেজপাড়া সড়কের বাসিন্দা। তাঁর বাবার নাম আজাহার আলী মৃধা। মেশিনচালিত খোলা টমটমে করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দোকানিদের মাল সরবরাহের কাজ করতেন আবদুল লতিফ।
স্বল্প আয়ে দুই ছেলে, স্ত্রী ও মাকে নিয়ে কষ্টে সংসার চলত আবদুল লতিফের। বড় ছেলে হাসান পড়াশোনা করে বাউফল সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগে। ছোট ছেলে মো. রুমান (১১) পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৪) সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আল মামুন বলেন, বগা বন্দর থেকে টমটম চালিয়ে বাউফলের উদ্দেশে ফিরছিলেন আবদুল লতিফ ও তিনি (আল মামুন)। গতকাল সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে বগা বন্দরের পূর্ব পাশে বিপরীত দিক থেকে আসা জ্বালানি তেলবাহী একটি ট্যাংকার এসে টমটমটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ছিটকে ওই ট্যাংকারের চাকার নিচে পড়ে আবদুল লতিফের মাথা ও মুখমণ্ডল থেঁতলে যায়। আর তিনি (আল মামুন) সড়কের পাশে পড়ে যান। স্থানীয় লোকজন তাঁদের দুজনকে উদ্ধার করে বগা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আবদুল লতিফকে মৃত ঘোষণা করেন। দুর্ঘটনার পর ট্যাংকারের চালক পালিয়ে গেছেন।
বগা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক মো. মহিববুল্লাহ বলেন, এই ঘটনায় মামলা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে জ্বালানি তেলের ট্যাংকারটি। পলাতক চালককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। নিহত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে আজ সকালে ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।