‘ক্ষমতা যখন থাকবে না, আওয়ামী লীগও তখন থাকবে না’

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা ফুটবল মাঠে বিএনপি আয়োজিত গণসমাবেশ। বুধবার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, যেদিন সরকার থাকবে না, তার পরদিন আওয়ামী লীগও থাকবে না। সেদিন গাছে গাছে ঝুলবে সাইনবোর্ড, তাতে লেখা থাকবে—এই গ্রামে আওয়ামী লীগ নেই।

আজ বুধবার বিকেলে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের পাশের ফুটবল মাঠে আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এ কথা বলেন। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে খুলনা জেলা ও মহানগর বিএনপি যৌথভাবে এই সমাবেশের আয়োজন করে।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এই সরকারের সমাধি যেদিন রচিত হবে, আওয়ামী লীগের সমাধিও সেদিন রচিত হবে। আর সেই সমাধিতে ফুল দিতে আসবেন আমাদের বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বাংলাদেশে এসে আওয়ামী লীগের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। আমরা সেদিনটা সৃষ্টি করতে চাই। সেদিনটার জন্য অপেক্ষা করতে চাই না।’

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে বলেন, ‘সবাইকে বলব, যাঁরা জনগণের বিরুদ্ধে আছেন, তাঁরা সময় থাকতে ঘরে যান। আর মাঠে থাকলে সোজা হয়ে যান। জনগণের বিজয় হবে। এই বিজয় আটকানোর ক্ষমতা কোনো কালে কোনো সশস্ত্র লোকের পক্ষে সম্ভব হয় নাই। ভবিষ্যতেও হবে না।’ গয়েশ্বর বলেন, ‘আমাদের জন্য আন্দোলন নয়, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আন্দোলন নয়। একটি অগণতান্ত্রিক শক্তি, একটি ফ্যাসিবাদী শক্তিকে চিরদিনের জন্য শিক্ষা দিতে চাই। যাতে ভবিষ্যতে রাতের বেলা ভোট চুরি করার দুঃসাহস কেউ না দেখায়। এটাই আমাদের লক্ষ্য।’

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এই সরকারের সমাধি যেদিন রচিত হবে, আওয়ামী লীগের সমাধিও সেদিন রচিত হবে। আর সেই সমাধিতে ফুল দিতে আসবেন আমাদের বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।’

সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে চায় না উল্লেখ করে গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, দেশের ৯৯ শতাংশ মানুষ তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়। কিন্তু চান না শুধু একজন আর তিনি হলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই ১৮ কোটি মানুষ মিলে একজনকে উঠিয়ে দিতে হবে।

সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মশিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা বলছেন ৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবেন। কিন্তু আমি বলছি, আগামী নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনে হবে না, হতে দেওয়া হবে না।’ তিনি নেতা-কর্মীদের চিন্তা না করে রাজপথে নামার আহ্বান জানান।

গণসমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির খুলনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম, বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী, খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, কেন্দ্রীয় সহপ্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান প্রমুখ। সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম। সভাপতিত্ব করেন খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমির এজাজ খান।

ডুমুরিয়া উপজেলা ফুটবল মাঠে বিএনপির গণসমাবেশে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে দলের নেতা-কর্মীরা যোগ দেন। বুধবার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

উজ্জীবিত বিএনপির নেতা-কর্মীরা

বিএনপির ক্ষমতা হারানোর পর খুলনা মহানগরের বাইরে উপজেলা পর্যায়ে এটাই ছিল সবচেয়ে বড় কোনো সমাবেশ। সমাবেশ ঘিরে স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে উঠেছিল মাঠ। বিভিন্ন জায়গা থেকে মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা হাজির হয়েছিলেন সমাবেশস্থলে। অনেক দিন পর বাধাহীন কর্মসূচিতে যোগ দিতে পেরে উচ্ছ্বসিত বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

খুলনা বিএনপির নেতারা জানান, এবারই কেন্দ্র থেকে মহানগরের বাইরে সমাবেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ডুমুরিয়া উপজেলায় কর্মসূচি পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মহানগরের বাইরে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর থেকেই বিএনপির নেতা-কর্মীরা খুবই উচ্ছ্বসিত ছিলেন। কিন্তু প্রশাসনের অনুমতি পেতে দেরি হওয়ায় সেই উৎসবে কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে তবে নেতা-কর্মীদের মনোবল ভেঙে যায়নি। এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে খুলনা বিএনপির পুনর্জন্ম হয়েছে।

সমাবেশ করার জন্য প্রথমে ডুমুরিয়া উপজেলার স্বাধীনতা চত্বর পাওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছিল বিএনপি। ওই হিসেবে দলের পক্ষ থেকে জোর প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু গত সোমবার একই স্থানে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালন করার জন্য আবেদন করে স্থানীয় যুবলীগ। পরবর্তী সময়ে ওই স্থানে কোনো পক্ষকেই সমাবেশ করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে ডুমুরিয়ার কৈয়া এলাকায় সমাবেশ করার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে কোনো ভালো জায়গা না থাকায় খর্ণিয়া বাজারের গরুর হাটে সমাবেশ করার জন্য আবেদন করেছিল বিএনপি। কিন্তু সেখানেও সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি প্রশাসন। শেষ মুহূর্তে রাত সাড়ে ১০টার দিকে গুটুদিয়া মাঠে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়। সকালে সেখানে তড়িঘড়ি করে মঞ্চ তৈরির কাজ করে দুপুর ১২টার দিকে সমাবেশ শুরু হয়।