মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার পূর্ব এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান রেহেনা পারভীন, তাঁর স্বামী মো. নেয়ামুল আকন। আজ সোমবার বেলা তিনটার দিকে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা দীপক বিশ্বাসের কাছে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেন তাঁরা।
এর আগে ১৭ মে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে রেহেনা পারভীন ও তাঁর স্বামী মো. নেয়ামুল আকন নৌকার প্রার্থী মাহাবুব আলমের কর্মী-সমর্থকদের দ্বারা হামলার শিকার হয়েছিলেন। একই সময় দায়িত্বরত রিটানিং ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দীপক বিশ্বাসকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়।
এ ঘটনায় ওই দিনই নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণা দেয় নির্বাচন কমিশন। ঘটনার তদন্ত করে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার প্রমাণ পাওয়ায় গতকাল রোববার কালকিনি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন ও কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসতিয়াক আশফাককে প্রত্যাহার করে উপযুক্ত কর্মকর্তা পদায়নের জন্য নির্দেশনা দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহাবুব আলমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি নির্বাচনের নতুন তফসিল ঘোষণা করে ইসি।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দীপক বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, পরিবেশ খুবই শান্ত ও সুন্দর ছিল। পুলিশের কড়া নিরাপত্তা ছিল। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর ও কালকিনি সার্কেল) সকাল থেকেই ফোর্স নিয়ে নির্বাচন অফিসে অবস্থান করেছেন। এ কারণে বহিরাগত কেউ নির্বাচন অফিসে প্রবেশ করতে পারেনি। প্রার্থীরাও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
নির্বাচন কর্মকর্তা আরও বলেন, পূর্ব এনায়েতনগর ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৩৩ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ১৪ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। নতুন সময়সূচি অনুযায়ী মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৯ মে, প্রতীক বরাদ্দ ৩০ মে। ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৫ জুন।
শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে খুশি প্রার্থীরা। স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী রেহেনা পারভীন বলেন, ‘সেদিন মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে নৌকার প্রার্থী মাহাবুব আলমের লোকজন আমাদের ওপর হামলা করে। হামলায় আমার ডান হাত ভেঙে গেছে। আমার স্বামীকে মারধর করে তারা। ভাঙা হাত নিয়ে ভাবছিলাম, আর হয়তো নির্বাচন করা হবে না। নির্বাচন কমিশনের বিশেষ সুযোগে আবার মনোনয়নপত্র জমা দিতে পেরে ভালো লাগছে। তা ছাড়া আজকের পরিবেশও ছিল শান্তিপূর্ণ।’
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ এন এম ওয়াসিম ফিরোজ প্রথম আলোকে বলেন, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে তাঁরা আগে থেকেই অবস্থান নেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী নেয়ামুল আকন ও তাঁর স্ত্রী রেহেনা পারভীন বেলা তিনটার দিকে এসে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে চলে যান। আজ নির্বাচন অফিসে কোনো ঝামেলার সৃষ্টি হয়নি। পুরো দিনটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ছিল।
দাপ্তরিক কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় ইউএনও জাকির হোসেন ও ওসি ইসতিয়াক আশফাক এখনো দায়িত্বে বহাল আছেন বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ এন এম ওয়াসিম ফিরোজ।