কয়েল থেকে দগ্ধ হয়ে মৃত্যু, শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন অধরা সায়মার

লাশ
প্রতীকী ছবি

হাসপাতালে ১০ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে হেরে গেলেন জান্নাতুস সায়মা (২২)। মশার কয়েল থেকে বিছানায় আগুন লেগে দগ্ধ হয়েছিলেন তিনি। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

চট্টগ্রামের রাউজানের নোয়াপাড়া ইউনিয়নের মোকারদীঘি পাড়ায় নিজ বাড়িতে ৭ অক্টোবর ভোরে জান্নাতুস সায়মা অগ্নিদগ্ধ হন। ওই সময় তাঁর স্বামী জসিম উদ্দিনও (৩৫) আহত হন। এ দম্পতির চার মাসের একটি মেয়েসন্তান রয়েছে। আজ সোমবার সকালে জানাজা শেষে নিজ গ্রামে সায়মাকে দাফন করা হয়েছে।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জান্নাতুস সায়মা ও জসিম উদ্দিন তাঁদের শিশুসন্তানকে নিয়ে ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে ঘরে মশার কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ভোরে মশার কয়েলের আগুন বিছানার চাদরে ছড়িয়ে পড়ে। সায়মা ও তাঁর স্বামী দগ্ধ হন। তবে শিশুটির কোনো ক্ষতি হয়নি। চিৎকার শুনে পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা তাঁদের উদ্ধার করেন। প্রথমে তাঁদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই দিন দুপুরে সেখান থেকে তাঁদের ঢাকায় পাঠানো হয়। সায়মার শরীরের ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। জসিমের দুই হাত ও শরীরের কিছু অংশ পুড়ে যায়।

সায়মা হিসাব বিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) সম্পন্ন করেছিলেন। মাস্টার্সে ভর্তির অপেক্ষায় ছিলেন। পাশাপাশি তিনি রাউজানের বাগোয়ান ইউনিয়নের পাঁচখাইন ডা. মুহাম্মদ মিয়া উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াতেন, বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত নয়। তাঁর স্বামী জসিম উদ্দিন নোয়াপাড়া মুসলিম উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক। দেড় বছর আগে তাঁদের বিয়ে হয়।

স্ত্রীকে হারিয়ে শোকে পাথর জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, সায়মার স্বপ্ন ছিল ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থায়ী শিক্ষক হবেন। কিন্তু নিয়তি সব শেষ করে দিল। শিশুসন্তান এখন মায়ের স্পর্শ না পেয়ে শুধুই কাঁদছে।

পাঁচখাইন ডা. মুহাম্মদ মিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রত্না রানী বড়ুয়া বলেন, ‘আমরা শোকাহত। সায়মা বিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। তিন বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানে সুন্দরভাবে পাঠদান করে আসছিলেন। দুর্ঘটনায় মেয়েটার জীবন শেষ হয়ে গেল।’