ব্রহ্মপুত্র নদ খনন
খননের মাটি আবার নদের বুকে
নদের ময়মনসিংহ সদর, ত্রিশাল ও গফরগাঁও উপজেলা অংশে খনন করা মাটির ৪১টি স্তূপ করে রাখা হয়েছে।
পানির প্রবাহ বাড়ানো এবং নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ব্রহ্মপুত্র নদ খনন করা হচ্ছে। কিন্তু খনন করা মাটি ও বালু দূরে না ফেলে নদের মধ্যে ও পাড়ে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। এতে নদ খননের লক্ষ্য অর্জিত হবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তা ছাড়া এ কারণে সরকারি সংস্থা বিআইডব্লিউটিএর শ্রম ও টাকা—দুটিরই অপচয় হচ্ছে।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, বর্ষাকাল শুরু হলেই নদের পাড়ে স্তূপ করে রাখা মাটি আবার নদে গিয়ে পড়বে। এতে ব্রহ্মপুত্র নদ আবার সরু খালে পরিণত হবে। যথাযথ পরিকল্পনার অভাবে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিআইডব্লিউটিএ বলছে, নদের পাড়ে স্তূপ করে রাখা মাটি স্থানীয়ভাবে নিলামে বিক্রি করার কথা। কিন্তু আগ্রহী ক্রেতা না পাওয়ায় মাটি বিক্রি হচ্ছে না। ফলে নদের পাড় থেকে মাটি সরানো যাচ্ছে না।
ব্রহ্মপুত্র নদ খনন প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র নদের ২২৭ কিলোমিটারের খননকাজ শুরু করেছে ২০১৯ সালের জুন মাসে। ২০২৪ সালের জুনে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় রয়েছে ৯০ কিলোমিটার অংশ। প্রকল্প শর্ত অনুযায়ী, ১০০ মিটার প্রস্থ ও ৬ মিটার গভীরতা রেখে খননকাজ করতে হবে।
জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ২২৭ কিলোমিটারের ৩৪ দশমিক ১৪ শতাংশ খনন করা হয়েছে। তা ছাড়া এখন পর্যন্ত ময়মনসিংহের ৯০ কিলোমিটারের ৪৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ খনন করা হয়েছে।
ব্রহ্মপুত্র নদের খনন হওয়া ময়মনসিংহ নগরের সাত কিলোমিটার অংশে গিয়ে দেখা যায়, কাচারি ঘাট, থানার ঘাট ও পাটগুদাম এলাকায় মাটির বড় বড় স্তূপ। এ স্তূপগুলো একেবারে শহররক্ষা বাঁধের ভেতর পড়েছে। বর্ষাকালে নদ ভরে গেলে স্তূপগুলো ডুবে যাওয়ার শঙ্ক রয়েছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরেই ওই সব স্তূপ পড়ে থাকায় মাটি সরে যাচ্ছে বলে জানান স্থানীয় লোকজন।
ময়মনসিংহের নাগরিক সংগঠন ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়কারী আবুল কালাম আল আজাদ বলেন, অপরিকল্পিতভাবে খননে ব্রহ্মপুত্র নদকে মূলত একটি খালে পরিণত করা হচ্ছে।
খনন প্রকল্পের সূত্রে জানা যায়, শুরু থেকেই খনন করা মাটি নদের পাড়ে রাখা হচ্ছে। বর্ষাকালে ওই সব বালু আবার গড়িয়ে পড়ে নদে। এ কারণে গত বছরের নভেম্বর মাসে খনন হয়ে যাওয়া বিভিন্ন স্থানে চর জাগে। চর জাগা নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর খনন প্রকল্পের কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলন করে জানান, পলি জমার কারণে চর পড়েছে।
জেলা প্রশাসন জানায়, ব্রহ্মপুত্র খননের মাধ্যমে উত্তোলিত মাটির মোট ৪১টি স্তূপ রয়েছে ময়মনসিংহ সদর, ত্রিশাল ও গফরগাঁওয়ে। চলতি বছরের মার্চে সর্বশেষ নিলামের উদ্দেশ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ওই সময় ময়মনসিংহ সদরের তিনটি ও ত্রিশাল উপজেলার একটি স্তূপের মাটি নিলামে কিনতে দরপত্র জমা পড়ে। প্রাথমিকভাবে ওই চারটি স্তূপ বিক্রির সিদ্ধান্ত হলেও বাকি ৩৭টি স্তূপের মাটি কিনতে কেউ দরপত্রে অংশ নেননি। ওই ৩৭টি স্তূপে মোট ১৭ দশমিক ২৯ কোটি ঘনফুট মাটি রয়েছে।
ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র খননকাজের দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী দিদারে আলম বলেন, ‘বর্ষাকালে মাটি নদীতে গড়িয়ে আসার আশঙ্কা থাকায় সদরের যে স্তূপগুলো নদের খুব কাছে, সেগুলো বর্ষার আগেই বিক্রি হয়ে যাবে।