খাদ্যমন্ত্রীর জেলায় লক্ষ্যমাত্রার ১ শতাংশ ধানও সংগ্রহ হয়নি

ধান
ফাইল ছবি

নওগাঁয় সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না কৃষকেরা। আমন ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরুর আড়ই মাসে লক্ষ্যমাত্রার ১ শতাংশের কম ধান সংগ্রহ করতে পেরেছে জেলার সরকারি গুদামগুলো। আর ২০ দিন পর সংগ্রহ অভিযান শেষ হবে। এই পরিস্থিতিতে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের জেলা নওগাঁতেই ধান সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হতে চলেছে।

অবশ্য এই সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯০ শতাংশ চাল সংগ্রহ হয়েছে। জেলায় প্রথম দফায় চাল ক্রয়ের বরাদ্দ পাওয়া নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পর পরবর্তী সময়ে জেলায় আরও ১১ হাজার মেট্রিক টন চাল ক্রয়ের বরাদ্দ আসে। সেই লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শতভাগ পূরণ হওয়ার পথে।

স্থানীয় কৃষক ও খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধানের বর্তমান বাজারদর ও গুদামে ধান ক্রয়ের সরকার নির্ধারিত দাম প্রায় সমান। এ পরিস্থিতিতে গুদামে ধান বিক্রি করে কৃষকদের তেমন লাভ থাকবে না। তার ওপর কৃষকদের অতীত অভিজ্ঞতা বলে সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করা অনেক ঝক্কিঝামেলার। আর্দ্রতার কথা বলে প্রতি মণে এক-দুই কেজি করে বেশি ধান নেওয়া হয়। অনেক সময় ধান ফেরতও দেওয়া হয়। কিন্তু স্থানীয় বাজারে এসব ঝক্কিঝামেলা নেই।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে সরকারি গুদামে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শেষ হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি। গত ২৫ নভেম্বর সারা দেশে একসঙ্গে সরকারি খাদ্যগুদামে ধান সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। জেলার ১১টি উপজেলার ১৯টি খাদ্যগুদামে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি মণে ১ হাজার ৮০ টাকা দরে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১০ হাজার ২৪৩ মেট্রিক টন। তবে নির্ধারিত সময় শেষ হতে চললেও ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও পৌঁছাতে পারেনি স্থানীয় খাদ্য বিভাগ। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত মাত্র ৯৭ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করতে পেরেছে জেলার সরকারি খাদ্যগুদামগুলো।

অন্যদিকে জেলায় প্রথম দফায় ২৩ হাজার ২৪৯ মেট্রিক টন সেদ্ধ আমন চাল ক্রয়ের বরাদ্দ আসে। নির্ধারিত সময়ের আগেই সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ায় পরবর্তী সময়ে আরও ১১ হাজার মেট্রিক টন চাল ক্রয়ের বরাদ্দ আসে। দুই দফায় নওগাঁ জেলার ১৯টি খাদ্যগুদামে চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৪ হাজার ২৪৯ মেট্রিক টন। গতকাল পর্যন্ত চাল সংগ্রহ হয়েছে ৩০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে নওগাঁর বিভিন্ন হাটবাজারে প্রতি মণ স্বর্ণা-৫ ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০ থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায়। গুটি স্বর্ণা ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০ থেকে ১ হাজার ৩০ টাকায়। বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৮৫০ টাকায়।

সরকারি গুদামে ধানের দাম ও বাজারে ধানের দাম প্রায় সমান থাকার পাশাপাশি আরও কিছু কারণ সামনে আনছেন কৃষকেরা। এর মধ্যে রয়েছে সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে সময়ক্ষেপণ, আর্দ্রতার কথা বলে হয়রানিসহ নানান ঝক্কিঝামেলা। ফলে খুব বেশি লাভের আশা না থাকলে সরকারি গুদামে ধান দিতে চান না কৃষকেরা।

এ বিষয়ে জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক আলমগীর কবির প্রথম আলোকে বলেন, এবার মৌসুমের শুরুতে আমন ধানের দাম ১ হাজার ১০০ টাকার ওপরে ছিল। এ কারণে কৃষকেরা গুদামে ধান বিক্রির জন্য আবেদনই করেননি। পরবর্তী সময়ে ধানের দাম কিছুটা কমতে কিছু কৃষক অ্যাপসের মাধ্যমে ধান বিক্রির জন্য আবেদন করেন। তবে সরকার নির্ধারিত ধানের সংগ্রহ মূল্য ও বাজারে ধানের দামের খুব বেশি পার্থক্য না থাকায় সেই সব কৃষকেরাও পরবর্তী সময়ে গুদামে ধান দিতে আগ্রহী হননি। ধান সংগ্রহ অভিযান সফল না হলেও সরকার চাল ক্রয়ের বরাদ্দ বাড়িয়ে দিয়ে সরকার খাদ্যনিরাপত্তা পরিস্থিতি ঠিক রাখার চেষ্টা করছে।