খালিয়াজুরির হাওরে আবারও বাড়ছে পানি, আতঙ্কে কৃষকেরা
নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলার ধনু নদে আবারও পানি বাড়তে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নদের পানি ৩৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় খালিয়াজুরি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তা ৫৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এদিকে নতুন করে নদের পানি বাড়ায় শঙ্কার মধ্যে পড়েছেন হাওরের কৃষকেরা। খালিয়াজুরির ছোট–বড় ৮৯টি হাওরে আধা পাকাসহ বোরো ধান কাটছেন তাঁরা। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত হাওরের প্রায় ৫৫ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮৮৩ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১১ লাখ ৫০ হাজার ৫৭০ মেট্রিক টন ধান। এর মধ্যে হাওরেই অর্ধেক আবাদ করা হয়। ২ এপ্রিল সন্ধ্যায় হঠাৎ উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে খালিয়াজুরির ধনু নদের পানি বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করে। খালিয়াজুরি ও মদন উপজেলার বিভিন্ন হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধগুলোতে পানির চাপ বেড়ে যায়। ৩ ও ৪ এপ্রিল মদন ও খালিয়াজুরির কীর্তনখোলা হাওর, লক্ষ্মীপুরসহ কয়েকটি হাওরের বেড়িবাঁধের বাইরের অংশ তলিয়ে যায়। এ ছাড়া কীর্তনখোলা, লেপসাই, চৈতারা, আশাখালী, দৈলং সাপমারাসহ বিভিন্ন হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের অন্তত ২০টি স্থান নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও উপজেলা প্রশাসন কৃষকদের নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলোতে সংস্কারকাজ করায় কোনো বাঁধ ভেঙে ফসলহানির ঘটনা ঘটেনি। ৭ এপ্রিল রাত থেকে পানি কমতে শুরু করায় নদের পানি বিপৎসীমার নিচে চলে আসে। খালিয়াজুরি পয়েন্টে বিপৎসীমা ৪ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার। গতকাল থেকে আবার নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়া বোরো ধানের ক্ষতি হতে পারে, এ আশঙ্কায় কৃষকদের দ্রুত ধান কাটার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
খালিয়াজুরির বল্লভপুর গ্রামের কৃষক হেলাল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেশিনের সাহায্যে আমরা এখন দ্রুত ধান কাটছি। হাওরের ৬০ শতাংশ ফসল কাটা হয়ে গেছে। আর এক সপ্তাহ সময় পেলে শতভাগ ফসল কাটা হয়ে যাবে।’
পাউবোর নেত্রকোনা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত বলেন, ধনু নদের পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে আছে। তবে গতকাল রাত থেকে দ্রুতগতিতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদে পানি বাড়ায় বাঁধগুলোতে চাপ বাড়ছে। তবে ফসল রক্ষা বাঁধগুলো এখনো ঝুঁকিমুক্ত আছে। বাঁধ রক্ষায় তাঁরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
খালিয়াজুরি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এইচ এম আরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, খালিয়াজুরিতে প্রায় ২২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্রি-২৮ জাতের ধান কাটা হয়ে গেছে। এখন দিনরাত হারভেস্টার (ধানকাটা মেশিন) দিয়ে দ্রুতগতিতে অন্য জাতের ধান কাটা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৫ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।