খালি পড়ে আছে ছয়তলা ভবন, রোগীরা মেঝেতে

এত দিন নতুন ভবনটি করোনার আইসোলেশন ওয়ার্ড ছিল। এখন সপ্তম তলার কাজ শুরু হওয়ায় ওই ভবনে কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না।

স্থান সংকুলান না হওয়ায় ওয়ার্ডের মেঝেতে শুয়ে–বসে সেবা নিচ্ছেন রোগীরা। গত রোববার ২৫০ শয্যার নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালেছবি: প্রথম আলো

২৫০ শয্যার নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের ছয়তলা একটি ভবন পড়ে আছে প্রায় তিন বছর ধরে। অথচ শয্যাসংকটের কারণে পুরোনো ভবনের ওয়ার্ড ও বারান্দার মেঝেতে ঠাঁই নিয়ে দিনের পর দিন চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন রোগীরা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, এত দিন করোনার আইসোলেশন ওয়ার্ড ছিল, এখন সপ্তম তলার কাজ শুরু হওয়ায় ওই ভবনে যাওয়া যাচ্ছে না। তবে দ্রুতই ওই ভবনের কার্যক্রম শুরু করা যাবে।

ছয়তলাবিশিষ্ট নতুন ওই ভবন নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে ৩০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০১৯ সালের এপ্রিলে। এরই মধ্যে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে সেখানে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু করা হয়।

এদিকে হাসপাতালের কয়েক দিনের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিদিনই ওয়ার্ডগুলোতে নির্ধারিত শয্যার অতিরিক্ত রোগী থাকছেন। শয্যার অভাবে রোগীদের ঠাঁই নিতে হয় মেঝেতে। গত রোববার দুপুরে হাসপাতালের ৪২ শয্যার মহিলা ওয়ার্ডে ১৪০ জন রোগী ভর্তি পাওয়া যায়। একইভাবে ২৫ শয্যার পুরুষ ওয়ার্ডে ১০১ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। শয্যার সংকুলান না হওয়ায় বাধ্য হয়ে রোগীদের ওয়ার্ডের মেঝেতে ও বারান্দায় অবস্থান করে চিকিৎসাসেবা নিতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন নার্স বলেন, ওয়ার্ডগুলোতে প্রতিদিনই ধারণক্ষমতার বেশি রোগী থাকছেন। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে ওয়ার্ডগুলোতে অতিরিক্ত বিছানা ঢোকানো হয়েছে।

গতকাল সোমবার দুপুরে কথা হয় জেলা সদরের পলাশবাড়ী ইউনিয়নের দোলাপাড়া গ্রামের লতিকা রানী রায়ের (৫৫) সঙ্গে। তিনি হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডের বারান্দায় থেকে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। লতিকা রানী বলেন, গলার সমস্যা নিয়ে ১ জুন হাসপাতালে ভর্তি হন, কিন্তু বিছানা না পেয়ে ৬ দিন ধরে বারান্দায় আছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নতুন ভবনে কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় হাসপাতালের পুরোনো ভবনে শয্যা বাড়িয়ে ১৭০টি করা হয়েছে। ওই ১৭০টি শয্যায় গত শনিবার রোগী ভর্তি ছিলেন ৩১০ ও রোববার ২৯৬ জন। এর আগে ১ জুন ২৯১, ২ জুন ২৭০ ও ৩ জুন ৩১৫ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার কল্পনা রানী দাস এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মেশকাতুল আবেদ বলেন, প্রতিদিন অন্তর্বিভাগে তিন শতাধিক এবং বহির্বিভাগে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ রোগী চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন।

এদিকে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতালটিতে ৫৮ জন চিকিৎসকের পদে কর্মরত আছেন ৪৪ জন। ১৫০ জন নার্সিং স্টাফের পদে আছেন ১৪৪, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর ৫৮ পদে আছেন ১৭ জন এবং চতুর্থ শ্রেণির ২৫ পদে আছেন ১৮ জন। এ ছাড়া হাসপাতালের কার্ডিওলজি, প্যাথলজি, শিশু, অর্থোপেডিকস, চক্ষু, অবেদনবিদসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে চিকিৎসকের পদ খালি আছে।

জ্যেষ্ঠ ওষুধ বিশেষজ্ঞ (মেডিসিন) চিকিৎসক এ এস এম রেজাউল করিম বলেন, হাসপাতালে রোগীর চাপ অনেক বেশি। প্রতিদিন বহির্বিভাগে ‘রেফার্ড’ রোগী দেখতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ জনকে।

সামগ্রিক বিষয়ে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক জহিরুল কবির বলেন, এক মাসের মধ্যে নতুন ভবনে রোগী স্থানান্তর করা সম্ভব হবে। আর জেলা সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর কবির প্রথম আলোকে বলেন, কার্ডিয়াক, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, অর্থোপেডিকসহ গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসক চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।