গঙ্গাচড়ায় আকস্মিক বন্যা, ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী

রংপুরে উজান থেকে আসা ঢলে গঙ্গাচড়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ঘরে পানি থাকায় মালামাল নিয়ে যাচ্ছেন এক ব্যক্তি। শুক্রবার রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বিনবিনা এলাকায়।ছবি: প্রথম আলো

উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নেমে আসায় এক রাতের পানিতে ভাটি অঞ্চল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় তিস্তা নদীর তীরবর্তী গ্রামে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের আনুমানিক ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ তিস্তা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর, লক্ষ্মীটারি, কোলকোন্দ, নোহালী ও গজঘণ্টাসহ পাঁচ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে বন্যা দেখা দেয়।

আজ শুক্রবার সকাল নয়টায় সরেজমিনে দেখা যায়, লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের চরইশরকুল, ইছলি, পূর্ব ইছলি, পশ্চিম ইছলি ও শংকর, বাগেরহাটহ ছয়টি গ্রামের সাড়ে তিন হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে কিছু পরিবার অন্যত্র আশ্রয় নিলেও এখনো অনেকেই পানির মধ্যে অবস্থান করছে।

বাগেরহাট এলাকার পানিবন্দী লোকজনকে ঘরের ভেতর চৌকির ওপর বসে থাকতে দেখা যায়। এ এলাকার বাড়িগুলোর রান্নাঘর, আঙিনাসহ ঘরে কোমরসমান পানি। এর পাশের পশ্চিম ইচলি গ্রামের রওশন আরা চৌকির ওপর টিভিসহ অন্য মালামাল তুলেছেন।

রংপুরে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা নদীতে পানি বেড়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে ভেসে যাচ্ছে পাতিল, কড়াইসহ বিভিন্ন গৃহস্থালী সামগ্রী। শুক্রবার রংপুরের গঙ্গাচড়ার পশ্চিম ইচলি এলাকায়।
ছবি: প্রথম আলো

বাগেরহাট এলাকার কৃষক জিল্লুর মিয়া বলেন, ‘বৃষ্টি নাই। এক রাইতোতে হঠাৎ পানি উঠিল। হামরাগুলা দিশেহারা হয়া পড়নো। খুব কষ্টোত আছি। শুকনা জায়গাও নাই যে সেটে (সেখানে) যায়া উঠমো।’

এ বিষয়ে লক্ষ্মীটারি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহেল হাদী বলেন, ‘উজান থেকে ভারত পানি ছেড়ে দেওয়ায় এক রাতেই পানি উঠল। আমার ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তাদের এখন শুকনা খাবার প্রয়োজন। এত তাড়াতাড়ি এসব শুকনা খাবার দেওয়াও সম্ভব নয়। তারপরও চেষ্টা চলছে পানিবন্দী মানুষের সাহায্য করা।’

ঘরে বন্যার পানি উঠায় নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছেন এক গৃহিণী। শুক্রবার রংপুর গঙ্গাচড়া উপজেলার বাগেরহাট এলাকায়।
ছবি: প্রথম আলো

গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা, উত্তর চিলাখাল, সাউথপাড়া, মটুকপুরসহ চার গ্রামের কমপক্ষে তিন হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ে অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে শুকনা স্থানে ছুটে গেছেন।

আজ সকাল ১০টায় সরেজমিনে দেখা যায়, কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা এলাকার ফজলুল হক বাড়ির মালামাল বস্তায় করে শুকনা জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। অনেকেই রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন। হাসিনা বেগমকে দেখা গেল, রাস্তার ওপর চুলায় রান্না করছেন। জোবেদা খাতুনকেও দেখা গেল রাস্তার ওপর কাজ করতে। জোবেদা বলেন, ‘রাইতোত পানি ওঠা শুরু হইল। উপায় না পায়া রাইতোতেই পানি পার হয়া এই রাস্তাত আশ্রয় নিছি।’

কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব আলী বলেন, ‘আমার এলাকায় প্রায় তিন হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী মানুষের তালিকা করা হচ্ছে। শুকনা খাবার দেওয়া হবে।’

এ ছাড়া গজঘণ্টা ইউনিয়নের ছালাপাক, মহিষাসুর, রমাকান্ত, আলালচর, জয়দেব এলাকা এবং নোহালী ও আলমবিদিতর এই দুই ইউনিয়নেও সাড়ে তিন হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নীলফামারীর ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে জানান, গতকাল রাত ১১টায় তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। আজ বেলা ১১টায় কিছুটা কমে ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তিস্তা ব্যারেজের সব কটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে রেখে সব কর্মকর্তা–কর্মচারীকে সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে।