গরুর দাম কম, তবু ক্রেতা নেই
রাত পোহালেই পবিত্র ঈদুল আজহা। কিন্তু এক দিন আগেও বরিশালে কোরবানির গবাদিপশুর হাট জমে ওঠেনি। ক্রেতা না থাকায় হাটে আনা অধিকাংশ গরু ও ছাগল অবিক্রীত রয়ে গেছে। এতে গবাদিপশুর ব্যবসায়ী ও খামারিরা চরম হতাশ। অনেকেই লাভ তো দূরের কথা, ব্যাপক লোকসান হবে বলে আশঙ্কা করছেন।
কয়েজন গরু ব্যবসায়ী বলেন, গত বছর কোরবানিতে যতসংখ্যক গরু-ছাগল বিক্রি হয়েছে, তার অর্ধেকও এবার বিক্রি হয়নি। তাই লোকসানের আশঙ্কা করছেন বিক্রেতারা।
বরিশালে এবার গরুর দাম আগের বছরের চেয়ে অনেক কম, কিন্তু এরপরেও ক্রেতা নেই। ৮০ হাজার টাকার গরু এবার ৫০ হাজার টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে না। হাটে বড় গরুর বিক্রি নেই বললেই চলে। যেসব গরুর দাম ২ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকার বেশি, সেসব গরু ৯০ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারছেন না ব্যাপারীরা। তাই অনেক ব্যাপারী সব বড় গরু বাড়ি নিয়ে যেতে চাচ্ছেন। এখন বাড়ি ফিরতে যে ট্রাকভাড়া, তা–ও পকেট থেকে গুনতে হবে এমন আশঙ্কা তাঁদের।
সোমবার বিকেলে বরিশাল নগরীর কাউনিয়া টেক্সটাইল মিল–সংলগ্ন কোরবানির গবাদিপশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, যশোর, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে একেকজন ব্যবসায়ী ১০ থেকে ১২টি পর্যন্ত গরু নিয়ে এসেছেন। ১৬ জুলাই থেকে এই হাট শুরু হয়েছে। কিন্তু এই পাঁচ দিনে মাত্র ৪ থেকে ৫টি গরু বিক্রি করতে পেরেছেন অনেকে। বাকি গরু ফিরিয়ে নিয়ে যেতে যে খরচ লাগবে, সেই অর্থের জোগাড় হয়নি তাঁদের।
কাউনিয়া টেক্সটাইল হাটের গরু বিক্রেতা সাতক্ষীরার আলমগীর মিয়া বলেন, গত বছর এই হাটে প্রথম ১০টি গরু এনেছিলাম। ১০টি গরু বিক্রির পরে আরও ছয়টি গরু এনে তা–ও ঈদের আগের দিন বিক্রি করে দিয়েছি। কিন্তু এবার অবস্থা এমন যে পকেটের টাকা খরচ করে বাড়ি ফিরতে হবে।
শহিদুল ইসলাম নামের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এই হাটে কোরবানির গরু কিনতে এসেছেন। গরুর দাম কেমন—এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘৬০ হাজার টাকায় একটি গরু কিনেছি। আগের বছর একই আকারের গরুর দাম ছিল ৯০ হাজার টাকার ওপরে। গরুর দাম এবার খুব কম। ক্রেতা নেই বললেই চলে।
বরিশাল নগরে এবার ১৬ জুলাই থেকে তিনটি গবাদিপশুর হাট বসে। সব কটি হাটেই এমন চিত্র দেখা যায় সোমবার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগরের চৌমাথা এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, প্রতিবছর তিনি একটি গরু কোরবানি করতেন। এবার আর্থিক সক্ষমতা না থাকায় কোরবানি দিচ্ছেন না। ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘আয়-বাণিজ্যের যে অবস্থা, তাতে এখন খেয়ে-পরে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকাই দুঃসাধ্য। সামনে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হয়, তা নিয়েও শঙ্কায় আছি।’
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বরিশাল নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, করোনা অতিমারিতে মধ্যবিত্তের আর্থিক সংগতি তলানিতে পৌঁছেছে। দেড় বছরের বেশি সময় ধরে মানুষের আয় কমে অর্ধেকে নেমেছে। এখন পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করতেই হিমশিম অবস্থা। অনেকে সঞ্চয় পর্যন্ত ভেঙে ফেলে ঋণ করে সংসারের ব্যয় সংস্থান করেছেন। ফলে কোরবানি দেওয়ার মতো এখন আর বেশির ভাগ মধ্যবিত্তেরই সামর্থ্য নেই।