গাংনীতে গৃহবধূ ও এক যুবককে বেঁধে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ

মেহেরপুর জেলার মানচিত্র

মেহেরপুরের গাংনীতে এক গৃহবধূ ও এক যুবককে রশি দিয়ে বেঁধে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার রাতে উপজেলার একটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। এদিকে গতকাল রোববার থেকে ওই দুজনকে নির্যাতনের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই গৃহবধূর স্বামী মধ্যপ্রাচ্যপ্রবাসী। শনিবার রাতে এলাকার মাতবরেরা ওই গৃহবধূ ও স্থানীয় এক মিস্ত্রিকে ঘরের মধ্যে বেঁধে রেখে মারধর করেছেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় কাজিপুর ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় মাতবরদের নিয়ে সালিস ডাকা হয়। সালিসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত ওই গৃহবধূ তাঁর শ্বশুরবাড়িতে আসতে পারবেন না।

ওই গৃহবধূ ও তাঁর স্বজনদের অভিযোগ, পারিবারিক কলহের জেরে ওই গৃহবধূর শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁকে বাড়িছাড়া করার জন্য নানা রকম চেষ্টা করে আসছিলেন। এর মধ্যে শনিবার রাতে কৌশলে এক বৈদ্যুতিক মিস্ত্রিকে তাঁর ঘরে ঢুকিয়ে তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।

ওই গৃহবধূ প্রথম আলোকে বলেন, বিয়ের চার বছর পার হয়ে গেলেও তাঁদের কোনো সন্তান হয়নি। বিষয়টি নিয়ে তাঁর শাশুড়ি অসন্তুষ্ট। এ ছাড়া স্বামীর পাঠানো টাকা নিয়েও সংসারে অশান্তি চলছিল। শনিবার রাতে ওই বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি ঘরের সুইচ মেরামতের জন্য ঢুকলে তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন এসে ঘরের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেন। এরপর তাঁরা চিৎকার করে এলাকার লোকজন জড়ো করেন। পরে স্থানীয় কয়েকজন মাতবর এসে তাঁদের দুজনকে বেঁধে রেখে মারধরে করেন। পরে সারা রাত তাঁদের ওই ঘরে বন্দী করে রাখা হয় বলে তিনি দাবি করেন।

গৃহবধূর চাচাতো ভাই বলেন, ওই ঘটনার পর তাঁর বোনকে এক আত্মীয়ের বাসায় রাখা হয়েছে। বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে শ্বশুরবাড়িতে উঠতে দেওয়া হবে না বলে সালিসে জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় গাংনী থানায় মামলা করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বলেন, ওই গৃহবধূ আর মিস্ত্রিকে মারধরের সময় স্থানীয় মাতবর আলহিম শেখ (৩৪), সরিফুল মিয়া (৩১), ছমির আলী (৪০), নাসির উদ্দিনসহ (৪৫) কয়েকজন অংশ নেন।

জানতে চাইলে আলহিম শেখ বলেন, স্থানীয় লোকজন ওই গৃহবধূ আর মিস্ত্রিকে অপকর্ম করতে দেখে হাতেনাতে ধরে ঘরে বন্দী করে রেখেছিলেন। এ ঘটনা চারপাশে ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই ওই দুজনের শাস্তি দাবি করেন। পরে সবার সিদ্ধান্তে তাঁদের রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। তবে মারধরের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

এ বিষয়ে কাজিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মুহা. আলম হোসেন বলেন, ওই দুজন মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকলে তাঁদের বিষয়টি পুলিশকে জানাতে বলা হয়েছে।

গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, গৃহবধূ ও এক যুবককে নির্যাতনের বিষয়ে এখনো থানায় মৌখিক বা লিখিত অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।