গাইবান্ধায় তিন ‘জিনের বাদশা’র যাবজ্জীবন
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে মা ও মেয়েকে ধর্ষণ মামলায় ‘জিনের বাদশা’ প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে যাবজ্জীবন সাজার পাশাপাশি এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেছেন আদালত। একই সঙ্গে খালাস দেওয়া হয়েছে দুই আসামিকে।
মঙ্গলবার দুপুরে গাইবান্ধার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২–এর বিচারক মোহাম্মদ আবদুর রহমান এ রায় দেন। এ সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
দণ্ডাদেশ পাওয়া তিন আসামি হলেন বেলাল হোসেন (৪০), এমদাদুল হক (৪০) ও খাজা মিয়া (৩৮)। তাঁদের বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। খালাস পাওয়া দুজন হলেন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা আসাদুল ইসলাম (২৫) ও আজিজুল ইসলাম (৩৫)।
মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মহিবুল হক সরকার জানান, খাজা মিয়াকে যাবজ্জীবন সাজা ও এক লাখ টাকা জরিমানার পাশাপাশি আরও আট বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। তিনি আরও বলেন, সাজাপ্রাপ্ত তিনজনই জিনের বাদশা প্রতারক চক্রের সদস্য। তাঁরা গুপ্তধন পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেন এবং মা ও মেয়েকে ধর্ষণও করেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, দীর্ঘদিন আগে খাজা মিয়া গভীর রাতে জিনের বাদশার পরিচয় দিয়ে জামালপুরের বাসিন্দা মা ও মেয়েকে তিনটি নম্বর থেকে ফোন দেন। গুপ্তধন দেওয়ার কথা বলে তাঁদের কাছ থেকে চার দফায় বিকাশের মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।
সর্বশেষ গুপ্তধন দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ২০১৮ সালের ৬ মে দুপুরে ফোন দিয়ে মা ও মেয়েকে গোবিন্দগঞ্জে মাজারে যেতে বলেন। তাঁদের কথামতো একই বছরের ১১ মে মা–মেয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের বালুয়া বাজারে যান। আসামিরা ওই দিন রাতেই তাঁদের মাজারে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে মোটরসাইকেলে তোলেন।
পরে ভোররাতে মা ও মেয়েকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করেন চক্রের সদস্যরা। পরে টাকা-পয়সা কেড়ে নিয়ে মা ও মেয়েকে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা শহরে ছেড়ে দিয়ে তাঁরা পালিয়ে যান। পরদিন ১২ মে ভুক্তভোগী মা বাদী হয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানায় মামলা করেন। পুলিশ মুঠোফোনের সূত্র ধরে খাজা মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। খাজা মিয়ার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বেলাল হোসেন ও এমদাদুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে আসাদুল ও আজিজুলকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়। সাক্ষ্যপ্রমাণে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি এক লাখ করে টাকা জরিমানা করা হয়। নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় অন্য দুজনকে খালাস দেওয়া হয়।
এদিকে আসামিপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সিরাজুল ইসলামসহ কয়েকজন আইনজীবী। সিরাজুল ইসলাম বলেন, তাঁরা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন।