শ্রমিকেরা বলেন, গতকাল দুপুরের পর এপ্রিলের বেতন ও ঈদ বোনাস দেওয়ার কথা ছিল। আগের দিন তাঁরা ঈদ উপলক্ষে নিজেদের বাড়ির মতো করে কারখানার ভেতরে রঙিন কাগজ দিয়ে সাজিয়েছিলেন। গতকাল সকালে তাঁরা কারখানায় সেজে–গুজে কাজে যোগ দেন। দুপুরের পর বেতন ও ঈদ বোনাস নিয়ে তাঁরা বাড়ি যাবেন, এমন আনন্দ-উদ্দীপনায় কাজ করছিলেন। কিন্তু কিছু ওঠার আগেই দুপুরে কারখানার কর্মকর্তারা বেতন-বোনাস না দিয়ে একে একে গা ঢাকা দেন। দুপুরের পর শ্রমিকেরা যখন বেতন-বোনাসের জন্য অপেক্ষায়, একপর্যায়ে তাঁরা জানতে পারেন, পাওনা দেওয়ার মতো কর্মকর্তাদের কেউ নেই।
এতে শ্রমিকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়। শ্রমিকেরা জানান, সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করে বেতন-বোনাস না পেয়ে তাঁরা দোকান থেকে বিস্কুট-পানি খেয়ে ইফতার করেন। সেখানেই রাত যাপন করেন। পানি ও শুকনা খাবার খেয়ে তাঁরা রোজা রাখেন। শ্রমিক আসমা আক্তার বলেন, ‘বেতন-বোনাস নিয়ে গ্রামে গিয়ে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ করব, কিন্তু এখন পর্যন্ত বেতন–বোনাস পাইনি।’
কারখানাটিতে শ্রমিকের সংখ্যা ৮৫০। নানাভাবে চেষ্টা করেও মালিক মো. আলিমুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। কারখানার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কারখানায় অর্থসংকটের কারণে সাবলেটে কাজ করিয়ে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেওয়া হয়। কিন্তু এবার ঈদের আগে ব্যাংকিং সমস্যার কারণে টাকা তুলতে না পারায় কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দিতে পারেনি।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার জাকির হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরাও মালিককে খুঁজছি। কারখানা–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, বিকেলের মধ্যে বেতনের ব্যবস্থা করা যাবে।’
গতকাল রাতে গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের সরবরাহকৃত পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, গাজীপুরে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএসহ ৩৭টি বিভিন্ন কারখানায় এপ্রিলের ১৫ দিনের বেতন এবং ২৮টি কারখানায় ঈদের বোনাস বকেয়া রয়েছে।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ৩০ এপ্রিল রাত ৯টা পর্যন্ত বিজিএমইএ-এর ৭৭৮টি কারখানার মধ্যে ৮টি, বিকেএমইএ-এর ১২৯টির মধ্যে ৪টি, বিটিএমএ-এর ১২৭টির মধ্যে ১টি এবং অন্যান্য ১ হাজার ১৮৬টি কারখানার মধ্যে ২৫টি কারখানায় সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এপ্রিলের ১৫ দিনের বেতন দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া বিজিএমইএয়ের ৮টি, বিকেএমইএয়ের ৪টি, বিটিএমএয়ের ১টি ও অন্যান্য ১৫টি কারখানায় কোনো ঈদ বোনাস দেওয়া হয়নি। আজ সব কারখানায় শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেওয়া হবে।