গাড়ি থামিয়ে তরতাজা বাঙ্গি ও তরমুজ কেনার ধুম
রাস্তার ধারে শত শত কৃষক বসে আছেন। তাঁদের সামনে বিভিন্ন আকারের বাঙ্গি ও তরমুজ। সদ্যই তোলা হয়েছে খেত থেকে। বিক্রির জন্য হাঁকডাক দিচ্ছে তাঁরা। এই ডাকে সাড়া দিয়ে ঢাকাগামী যাত্রী মো. ফয়েজ উদ্দিন নামেন। কিনে নেন ‘কুমড়ো’ আকৃতির বড় দুটি বাঙ্গি। দাম মাত্র ২০ টাকা।
ক্রেতা ফয়েজ উদ্দিনের সঙ্গে কথা হয় নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার সিধুলি গ্রামে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে। বলেন, ‘এই বাঙ্গি খুব টাটকা। দামেও সস্তা।’
নাটোরের বড়াইগ্রামের বনপাড়া, গুরুদাসপুর থানার মহাসড়কের পাশেই বাঙ্গি-তরমুজের বাজার বসিয়েছেন কৃষকেরা। চলনবিলঘেরা নাটোরের এই দুই উপজেলায় বাঙ্গি-তরমুজের চাষ বেশি হয়। অনেক কৃষক ‘সাথি ফসল’ হিসেবেও এই দুই ফল আবাদ করেন।
রাজশাহীতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন রাহাত আলী। তাঁকেও বাঙ্গি আর তরমুজ আকৃষ্ট করে। তিনি তিনটি বাঙ্গি আর তরমুজ কিনেছেন। বাঙ্গির আকারভেদে দাম ১০-৪০ টাকা। তরমুজ আকারভেদে দাম ৬০-১৫০ টাকা। একটি বাঙ্গি দেখিয়ে বললেন, যে বাঙ্গি ১০ টাকা দিয়ে কিনেছেন, রাজশাহীর বাজারে ৪০ টাকার নিচে পাওয়া যাবে না। আর ২০০ টাকার নিচে তো তরমুজ নাই-ই। আর ঢাকায় এগুলো প্রায় দ্বিগুণ দামে কিনতে হতো। তরমুজ-বাঙ্গি পেয়ে পরিবারের সবাই খুশি হবেন। বললেন, তিনি সাভারে থাকেন।
গুরুদাসপুরের সিধুলি গ্রামের চাষি শাহেদ আলী বলেন, তিনি রসুনের সঙ্গে বাঙ্গি চাষ করেছিলেন। এতে বাঙ্গির ফলন ভালো হয়েছে। প্রতিদিন খুব ভোরে এসে জমি থেকে বাঙ্গি তোলেন। পরে মহাসড়কেই বিক্রি করেন। বাজারে যেতে হয় না। অন্য কোনো ঝামেলাও নেই। প্রতিদিন তিনি প্রায় পাঁচ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি করেন এই সড়কের পাশে।
একই গ্রামের কৃষক মো. ফিরোজ বলেন, এখন মানুষ ঈদ সামনে রেখে বাড়িতে যাচ্ছেন। বিশেষ করে ঢাকার মানুষ ফল দেখলেই কিনতে চায়। দাম কম বলে দর-কষাকষি করতে হয় না। অনেকে রাস্তায় বাঙ্গি দিয়েই ইফতার সেরে নেন।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর বাঙ্গি আর তরমুজ দ্বিগুণ জমিতে চাষ হয়েছে। চলতি বছর নাটোর জেলায় তরমুজ চাষ হয়েছে ১ হাজার ৪০৮ হেক্টর জমিতে। গত মৌসুমে এই জেলায় তরমুজ চাষ হয়েছিল ৬২১ হেক্টর জমিতে। চলতি বছর জেলায় বাঙ্গি চাষ হয়েছে ১ হাজার ১৩৬ হেক্টর জমিতে। গত মৌসুমে বাঙ্গির চাষ হয়েছিল ৮৬৮ হেক্টর জমিতে।
জেলার অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) সাইফুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় চাষিরা রসুনের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে বাঙ্গি চাষ করে থাকেন। তরমুজও একইভাবে চাষ হতো। তবে গত বছর বাঙ্গি ও তরমুজে ভালো দাম পাওয়ায় একক জমিতেও চাষ বেড়েছে। সব মিলিয়ে চাষ দ্বিগুণ হয়েছে। রমজানে এসব ফলের চাহিদা বেশি ছিল। মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত কৃষক এই দুই ফল বিক্রি করে থাকেন।