গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগে পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী গ্রেপ্তার
তিন বছর ধরে গৃহকর্মী এক কিশোরীকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেপ্তার পুলিশের এক উপপরিদর্শকের (এসআই) স্ত্রী সুমি বেগমকে আজ বৃহস্পতিবার সকালে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় গ্রামবাসী তাঁকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। পরে রাতে ওই কিশোরীর মা বাদী হয়ে নাটোর সদর থানায় মামলা করেন।
নাটোর সদর থানা–পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার পাইকোরদোল গ্রামের মঞ্জিল হোসেন অভাব–অনটনের কারণে তিন বছর আগে তাঁর মেয়ে শ্যামলী খাতুনকে (১২) এসআই খন্দকার আতিকুর রহমানের বাসায় গৃহকর্মীর কাজে দেন। মাসিক ১ হাজার ২০০ টাকা করে প্রথম ৮ মাস তাঁকে বেতন পাঠানো হতো। পরে বেতন পাঠানো বন্ধ করে দেওয়া হয়। শত অনুরোধ সত্ত্বেও ওই কিশোরীকে তাঁর মা–বাবার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হতো না।
বিষয়টি থানা-পুলিশকে জানানোর হুমকি দিলে গতকাল বিকেলে ওই পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী সুমি বেগম ও তাঁর মা দিলারা বেগম ওই কিশোরীকে নিয়ে পাইকোরদোল গ্রামে আসেন। মা–বাবার কাছে এসে ওই কিশোরী জানায়, তিন বছর ধরে তাকে নানা অজুহাতে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। আগুনের ছেঁকা দেওয়াসহ তাকে নানা নির্যাতন চালানো হয়েছে। শব্দ করে কাঁদলে নির্যাতনের মাত্রা বাড়ানো হতো। এই নির্যাতন করতেন শুধু সুমি বেগম।
ওই কিশোরী আরও জানায়, পুলিশ কর্মকর্তা খন্দকার আতিকুর তার সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করতেন। তাকে মা বলে ডাকতেন। তাকে মারধরের কারণে তিনি তাঁর স্ত্রীকে বকাঝকা করতেন। অধিকাংশ সময় তাঁর অনুপস্থিতিতে নির্যাতন চালানো হতো।
পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি পাইকোরদোল গ্রামের লোকজন ঘটনাটি জানার পর বুধবার সন্ধ্যায় সুমি বেগম ও তাঁর মাকে আটক করে রাখেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গেলে গ্রামবাসী তাঁদের পুলিশে হস্তান্তর করেন। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নির্যাতিতা কিশোরী ও পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী সুমি বেগমের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলেন। অবশেষে রাত ১১টার দিকে সুমির বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন ওই কিশোরীর মা নার্গিস বেগম। শিশু আইন-২০১৩–এর ৭০ ধারায় এই মামলা করা হয়। এই ধারায় সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে।
নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো. তারেক জুবায়ের জানান, গ্রামবাসীর মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ গতকাল সন্ধ্যায় পাইকোরদোল গ্রামের একটি বাড়ি থেকে অভিযুক্ত সুমিকে আটক করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় ওই কিশোরীর মায়ের মামলা নেওয়া হয়। এখন পুলিশ অভিযোগ তদন্ত করবে। আইন সবার জন্য সমান। এ ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।