শরীয়তপুরের জাজিরার একটি গ্রামে ৩০ বছর বয়সী এক গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। ধর্ষণের দৃশ্য মুঠোফোনে ভিডিও করে তা ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সালিসে তা মীমাংসার চেষ্টা করেন। জাজিরা থানার পুলিশ বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ওই ইউপি সদস্যসহ তিনজনকে গতকাল বুধবার রাতে গ্রেপ্তার করে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার এস এম আশ্রাফুজ্জামান।
জাজিরা থানা-পুলিশ, মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ৬ ফেব্রুয়ারি দুদু খাঁ (৫০) নামের এক ব্যক্তি গৃহবধূকে ধর্ষণ করেন। ঘটনাটি মুঠোফোনের ক্যামেরায় ধারণ করেন তাঁর সহযোগী নয়ন মোড়ল নামের এক যুবক। নয়ন ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। বিষয়টি জানতে পেরে মীমাংসা করতে স্থানীয় ইউপি সদস্য ৯ ফেব্রুয়ারি সালিসের আয়োজন করেন। সালিসে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত দুদু খাঁ ও নয়ন মোড়লকে ২০টি করে জুতার বাড়ি দিয়ে মীমাংসা করে দেওয়া হয়। ওই রাতেই গৃহবধূ আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। বিষয়টি পুলিশ জানতে পেরে ওই গৃহবধূর সঙ্গে যোগাযোগ করে। গতকাল বুধবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ওই নারী জাজিরা থানায় মামলা করেন।
মামলায় দুদু খাঁ ও নয়ন মোড়লের পাশাপাশি ইউপি সদস্য ও তাঁর সহযোগীকে আসামি করা হয়। নড়িয়া-জাজিরা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান গতকাল রাতে ইউপি সদস্যসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। আজ বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে তাঁদের শরীয়তপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আজ ওই গৃহবধূর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে। সেখানে বসে তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী স্থানীয় বাজারে ডিম বিক্রি করেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে দুদু খাঁ ও নয়ন আমাদের বাড়িতে আসেন। আমার হাত-পা বেঁধে ধর্ষণ করেন দুদু খাঁ। আর সেই দৃশ্য ভিডিও করেন নয়ন। ঘটনাটি থানায় জানাতে বাধা দিয়েছে এলাকার মেম্বার (ইউপি সদস্য)। তিনি ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সালিসের আয়োজন করেন। আমি সেই সালিস মানিনি। তাই মামলা করেছি।’
পুলিশ সুপার এস এম আশ্রফুজ্জামান বলেন, ‘একটি ফৌজদারি অপরাধের সালিস কেউ করতে পারেন না। পুলিশকে না জানিয়ে নিজ দায়িত্বে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন যাঁরা, তাঁদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। আর যাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’