রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে সরকারি পুকুরের একটি অংশ ভরাটের পর প্লট করে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার বাঁশলীতলা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে সরকারি পুকুর ভরাটের অভিযোগে আদালতে মামলা করেছেন ওই এলাকার তিন ব্যক্তি। তবে জমির মালিক বলছেন, তাঁরা কোনো সরকারি পুকুর ভরাট করেননি। নিয়ম মেনে জমি কিনে, সেখানে থাকা পুকুর ভরাট করেছেন।

মামলার আরজি সূত্রে জানা গেছে, গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ী হাট এলাকার বাঁশলীতলায় রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের পাশে কয়েকজন মিলে জমি কিনেছেন। এই জমির এক পাশে ২ দশমিক ৫৫ একরের পুরোনো সরকারি পুকুর রয়েছে। একটি পক্ষ কয়েক রাতের মধ্যে পুকুরের একাংশ ভরাট করে। পুকুরটি ১ নম্বর খাস খতিয়ানের জমি। এ ছাড়া পুকুর ভরাটের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি।

মামলার বাদী সিরাজুল ইসলাম বলেন, পুরোনো ওই পুকুরের পানি সেখানকার চাষাবাদের কাজে লাগত। ইউনিয়ন ভূমি অফিসের যোগসাজশে সরকারি এ পুকুর ভরাট করা হয়েছে। এটি এলাকাবাসী মানবেন না। তাই তিনিসহ আরও কয়েকজন জনস্বার্থে এলাকাবাসীর হয়ে গোদাগাড়ী থানার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে গত ১৮ জানুয়ারি মামলা করেন। আগামী ১৩ এপ্রিল এ নিয়ে আদালতে শুনানি রয়েছে।

বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছেন গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. খায়রুল ইসলাম। প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ওই জমি ১ নম্বর খাস খতিয়ানের। পরে এটি আরএস খতিয়ানভুক্ত করা হয়। জমির একটি অংশ যে পুকুর, সেটি দুই থেকে আড়াই ফুট মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বেশ কয়েক ব্যক্তি জমির মধ্যে ইটের দেয়াল দিচ্ছেন। ২০-২৫টি প্লট তৈরি করা হয়েছে। মূল জমির এক পাশে পুকুরের অর্ধেক ভরাট করা। সেখানে গিয়ে দেখা হয় সেলিম হোসেন নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। নিজেকে জমির মালিক দাবি করে ছবি তোলার বিষয়ে আপত্তি জানান ওই ব্যক্তি। তিনি বলেন, তাঁরা কয়েকজন মিলে নিয়ম মেনে জমি কিনেছেন। কিন্তু আরেক পক্ষ ষড়যন্ত্র করছে। তাঁরা কোনো পুকুর ভরাট করেননি। পুকুর থাকলেও এটি রেকর্ড করা জমির অংশ।

পরে আরও বেশ কয়েক ব্যক্তি আসেন সেখানে। তাঁদের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব মহিদুল ইসলাম ওই এলাকার বাসিন্দা। তিনি বলেন, এখানে যে পুকুর ছিল, সেই পানি দিয়ে একসময় চাষাবাদ হতো। পুকুরটি কারও মালিকানাধীন ছিল না বলে সবাই এর পানি ব্যবহার করতেন। কেউ কোনো দিন নিজের দাবি করে মাছ চাষও করেননি। হঠাৎ এটা ভরাট করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী এজাজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, জমিটি ১ নম্বর খাস খতিয়ানের ছিল। একই সঙ্গে সেখানে পুকুর ছিল। পুকুর কোনো অবস্থাতেই বন্দোবস্তযোগ্য নয়। এই সম্পত্তি যদি কারও নামে রেকর্ড হয়, সেটা সঠিক নয়। যদি এটা করা হয়, তবে কারও যোগসাজশে বা জাল কাগজপত্র তৈরি করে করা হয়েছে। তাই এটা সরকারি জমি।

এজাজুল হক আরও বলেন, ওই পুকুর দীর্ঘদিন সরকারি বলেই এলাকার মানুষ ব্যবহার করত। আদালতে মামলা হয়েছে। অভিযোগ আমলে নিয়ে ১৩ এপ্রিল শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।