গোপন কক্ষে ব্যালটে সিল মেরে বাক্সে ভরছিলেন আনসার সদস্য
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষে ঢুকে ভোটারদের বদলে কেন্দ্রে দায়িত্বরত এক আনসার সদস্য ব্যালটে সিল মেরে বাক্সে ফেলছেন। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে বিহার মোহাম্মদ আলী মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটে।
ওই আনসার সদস্যের নাম শাহানা আক্তার। ভোটারদের বদলে সিল মেরে ব্যালট বাক্সে ফেলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি ভোটারদের বদলে ব্যালটে সিল মেরে বাক্সে ফেলেননি। এক মধ্যবয়সী নারীকে সহায়তা করার জন্য তিনি কেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে তাঁকে সহায়তা করেছেন। তবে ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয়ের একই চত্বরে থাকা বিহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সঞ্জিব কুমার সরকার বলেন, কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই এখানে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। বেলা তিনটা পর্যন্ত ১ হাজার ৮৫ ভোট পড়েছে। এই কেন্দ্রে ভোটার ১ হাজার ৯১৪।
এদিকে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী মতিয়ার রহমান অভিযোগ করেছেন, সকালের দিকে নৌকার সমর্থকেরা এই কেন্দ্রের একাধিক বুথ থেকে তাঁর এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন।
মতিয়ার রহমান বলেন, সকাল ১০টার দিকে এই কেন্দ্রে ভোটারের ঢল নামে। কিন্তু নৌকার সমর্থকেরা ভোটকেন্দ্রে ইটপাটকেল ছুড়ে, হাঙ্গামা বাধিয়ে আতঙ্ক তৈরি করেন। এ সময় এজেন্টদের বের করে দিয়ে তাঁরা কেন্দ্র দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এর পর থেকেই কেন্দ্র অনেকটা ফাঁকা হয়ে যায়। এদিকে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে কেন্দ্রের বাইরে ককটেল হামলা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।
এর আগে সৈচানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোটরসাইকেলের সমর্থকেরা নৌকার সমর্থকদের ধাওয়া করেন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
কোথাও তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে।আলী হায়দার চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, বগুড়া
এদিকে ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে রায়নগর ইউপির চশমা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী শফিউজ্জামান সাইফুলকে ভ্রাম্যমাণ আদালত আটক করেন। বুলুরচক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ওই প্রার্থী ছাড়াও একজন পোলিং এজেন্টসহ তিনজনকে আটক করা হয়।
এদিকে চক ঝিনাহার ইবতেদায়ি মাদ্রাসা কেন্দ্র থেকে নৌকার সমর্থকেরা অন্য প্রার্থীদের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। চশমা প্রতীকের প্রার্থী ওবাইদুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, তাঁর পোলিং এজেন্টদের নৌকার সমর্থকেরা কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছেন। শিবগঞ্জ উপজেলার দেউলী ইউপির লক্ষ্মীকোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও একই চিত্র। এখানে নৌকার এজেন্টরা প্রকাশ্যে ভোটারদের নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রকাশ্যে সিল মারার অভিযোগ
অন্য দিকে আটমূল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং আটমূল উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোট শুরুর আগেই স্বতন্ত্র প্রার্থী (আনারস প্রতীক) মোজাফফর হোসেনের এজেন্টদের ওপর আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী (মোটরসাইকেল) বেলাল হোসেনের কর্মীরা হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
আনারস প্রতীকের এজেন্ট এনামুল হক বলেন, ‘সকাল আটটায় এজেন্টরা পরিচয়পত্রসহ কেন্দ্রে গেলে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা তাঁদের ওপর হামলা করেন। এরপর তাঁদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে তাঁরা ভোটকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নেন। দিনভর প্রকাশ্যে সিল মারার উৎসব চললেও এসব দেখার কেউ ছিল না।’
এই কেন্দ্রে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বেলাল হোসেন ও মোজাফফর হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ছাড়া একই ইউনিয়নের বড় বিলঘরিয়া দাখিল মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রেও নৌকা ও আনারসের সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদারকি করছিলেন বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী হায়দার চৌধুরী। তিনি বলেন, কোথাও তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে।