গোয়ালন্দে তিন মাসের কন্যাশিশুকে হত্যার অভিযোগে বাবা গ্রেপ্তার
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে তিন মাসের কন্যাশিশুকে হত্যার অভিযোগে বাবা রুবেল ব্যাপারীকে (২৮) গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। ঘটনার পর তিন মাসের বেশি সময় পলাতক থাকার পর গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে গোয়ালন্দ ঘাট থানা-পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁকে আদালতে তোলা হলে আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এ ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছিল গত ১৬ আগস্ট। ওই দিন শিশুটির মা বাদী হয়ে থানায় তাঁর স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ননদের বিরুদ্ধে মামলা হত্যা মামলা করেন।
কন্যাসন্তান জন্মের কারণে রুবেল ও তাঁর পরিবার নাখোশ হয়। এরপর থেকে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে রুবেল কাকলীর ওপর শারীরিক নির্যাতন করতেন বলে অভিযোগ ওঠে।
পুলিশ, পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গোয়ালন্দ উপজেলার দক্ষিণ দৌলতদিয়া ব্যাপারীপাড়ার আবদুল কুদ্দুস শেখের মেয়ে কাকলী আক্তারের (২৩) সঙ্গে উপজেলার বকারটিলা গ্রামের ছহোর উদ্দীন ব্যাপারীর ছেলে রুবেল ব্যাপারীর তিন বছর আগে বিয়ে হয়। তাঁদের দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পরিবার মেনে নিলে বিয়ের পর বাড়িতে স্ত্রী কাকলীকে রেখে রুবেল ঢাকায় কাজ করতে যান। এরপর তাঁদের ঘরে একটি কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। বাচ্চাটির নাম রাখা হয় রুনা। কন্যাসন্তান জন্মের কারণে রুবেল ও তাঁর পরিবার নাখোশ হয়। এরপর থেকে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে রুবেল কাকলীর ওপর শারীরিক নির্যাতন করতেন বলে অভিযোগ ওঠে।
এর মধ্যে মেয়ে অসুস্থ হলে ১৩ আগস্ট তাঁকে চিকিৎসক দেখাতে ফরিদপুর হাসপাতালে নিয়ে যান কাকলী। ওই দিন দুপুরে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরে রুবেল স্ত্রীকে না পেয়ে ফরিদপুর ছুটে যান। সেখানে কাকলীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও তাঁকে গালমন্দ করেন তিনি। পরদিন ১৪ আগস্ট নাতনিকে দেখতে রুবেলের বাড়িতে আসেন কাকলীর মা নাজমা বেগম এবং দাদি জহুরা বেগম। রুবেল মা ও দাদির সঙ্গে এ সময় কাকলী খারাপ আচরণ করেছেন অভিযোগ উঠলে কাকলীকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন রুবেল। রুবেলের সঙ্গে এ সময় মারপিটে যোগ দেন শাশুড়ি রুবী বেগম, শ্বশুর ছহোর উদ্দীন ব্যাপারী ও ননদ চায়না বেগম। এমন পরিস্থিতিতে মেয়ে ও নাতনিকে নিজ বাড়িতে আনার জন্য সেখানে যান কাকলীর মা নাজমা বেগম। তাঁরা কিছু দূর যেতেই রুবেল কাকলীর কোল থেকে তিন মাসের শিশু রুনাকে কেড়ে নিয়ে নিজের কাছে রাখেন। পরদিন ১৫ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে কাকলীর কাছে মেয়ের মৃত্যুর খবর আসে।
মেয়েকে হত্যার অভিযোগে কাকলী আক্তার ওই দিনই থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ ওই রাতেই রুবেলদের বাড়ি থেকে শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করে এবং শাশুড়ি রুবী বেগমকে আটক করে। এ সময় অন্যরা বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। পরদিন ১৬ আগস্ট কাকলী আক্তার বাদী হয়ে স্বামী রুবেল ব্যাপারী, শ্বশুর ছহোর উদ্দীন ব্যাপারী, শাশুড়ি রুবী বেগম ও ননদ চায়না বেগমকে অভিযুক্ত করে থানায় হত্যা মামলা করেন।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল-তায়াবীর জানান, মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিয়ে শিশুহত্যার অভিযোগে শিশুর মা বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন। দীর্ঘদিন পর আসামি শিশুটির বাবা রুবেলের বাড়ি আসার খবর পেয়ে পুলিশ বুধবার বিকেলে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় এর আগে আরেক আসামি শিশুটির দাদি রুবী বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি দুই আসামি পলাতক।