গ্রামবাসীর তোপের মুখে অবৈধ খননযন্ত্রসহ নৌকা সরিয়ে দিল পুলিশ
বাঁধের গোড়ায় শত শত বালুবাহী নৌযান। এর মধ্যে অবৈধ খননযন্ত্র লাগানো কয়েকটি নৌকা প্রস্তুতি নিচ্ছিল বাঁধের গোড়া থেকে বালু উত্তোলনের। বাঁধ ভাঙলে ছয়টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এমন শঙ্কায় গ্রামবাসী জড়ো হন। এ সময় অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের সঙ্গে একদল পুলিশ দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন গ্রামবাসী। তাঁরা দা-লাঠিসোঁটা নিয়ে সশস্ত্র অবস্থান নেন। গ্রামবাসীর অবস্থানের মুখে শেষ পর্যন্ত পুলিশ অবৈধ খননযন্ত্রের নৌকাগুলোকে বাঁধ এলাকা থেকে সরিয়ে দিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদের তীরের কালাপাথর বাঁধ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, ইজারাবহির্ভূত স্থান থেকে বালু উত্তোলনে অবৈধ খননযন্ত্র পাহারায় পুলিশ ব্যবহার করে অবৈধ তৎপরতা চালিয়েছে বালু কারবারিরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সিলেটের বালু ও পাথর কোয়ারির সঙ্গে নৌযোগাযোগের মাধ্যম ধলাই নদ। কোম্পানীগঞ্জের ইসলামপুর পূর্ব ইউনিয়নে নদের তীরে ইসলামগঞ্জ বাজারের দক্ষিণ ও পশ্চিম পাড়ে ১৯৯৭ সালে প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বাঁধ দিয়ে বন্যা প্রতিরক্ষায় স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ‘কালাপাথর বাঁধ’ নামে পরিচিত এই বাঁধের জন্য ইসলামগঞ্জ বাজার, উত্তর রাজানগর, ঢালারপাড়, উত্তর ও দক্ষিণ ঢালারপাড় এবং মোস্তফানগর গ্রামে পাহাড়ি ঢলে বন্যা থেকে রক্ষা পায়। ধলাই নদের একটি অংশ এ বছর বালুমহাল হিসেবে ইজারা দেওয়া হলে পাথর কোয়ারিতে বোমা মেশিন ব্যবহারকারীরা বালুর কারবারে নেমে অবৈধভাবে খননযন্ত্র (ড্রেজার) দিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করেছেন।
স্থানীয় কয়েকজন বলেন, কালাপাথর বাঁধ এলাকা ধলাই নদের বালুমহালের বাইরের একটি এলাকা। বাঁধের গোড়া খুঁড়লে পাথর মিলবে, এ রকম ধারণা থেকে বাঁধ এলাকায় খননযন্ত্র দিয়ে বালু তোলার নামে পাথর তোলার চেষ্টায় জড়িত রয়েছে একটি চক্র। গত ৭ আগস্ট এ ব্যাপারে এলাকাবাসীর পক্ষে মোহাম্মদ আলী কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়ে প্রতিকার চেয়েছেন। পুলিশকে জানানোর পর থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের একটি দল অনেকটা পাহারা দেওয়ার মতো থাকে।
আজ বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কালাপাথর বাঁধ এলাকায় গ্রামবাসীর অবস্থানকালে একটি ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী যখন বাঁধ এলাকায় অবস্থান করছিলেন, তখন বালু উত্তোলনকারীদের নৌযানের ভেতর থেকে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় একদল পুলিশ বের হয়ে আসে। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ দেখে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীদের অনেককে তখন লাঠিসোঁটা, দা-রামদা নিয়ে বাঁধ এলাকায় অবস্থান নেন। গ্রামবাসীর আরেকটি দল তখন নদ এলাকায় নেমে বালুবাহী নৌযানকে সরিয়ে দিতে গিয়ে পুলিশকে ভর্ৎসনা জানায়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পরে অবশ্য পুলিশ অবৈধ বালুর কারবারিদের বাঁধ এলাকা থেকে সরিয়ে দেয়।
অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ দেখে গ্রামবাসী লাঠিসোঁটা, দা-রামদা নিয়ে নিরুপায় হয়ে অবস্থান নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন এলাকার কয়েক বাসিন্দা। তাঁরা বলছেন, বাঁধ এলাকাটি পুরোটা বালুমহালের ইজারার বাইরে। এখান থেকে খনন করে বালু তুললে ছয়টি গ্রাম ভাঙনের মুখে পড়বে। বালুবাহী নৌযান বাঁধ এলাকা থেকে সরিয়ে নিতে গ্রামবাসী শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছিলেন। এর মধ্যে বালু কারবারিদের নৌযানের ভেতর পুলিশের একটি দল দেখে মানুষ ক্ষুব্ধ হন এবং লাঠিসোঁটা, দা-রামদা উঁচিয়ে অবস্থান নিয়ে মারমুখী হন। এটা করতে তাঁরা বাধ্য হয়েছেন। তোপের মুখে অবশেষে পুলিশের দলটি অবৈধ বালুর কারবারিদের সরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করেছে।
বাঁধে গ্রামবাসীর বিক্ষুব্ধ অবস্থানে এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি ও ইসলামপুর পূর্ব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুল্লুক হোসেনও ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অবৈধ বালুর কারবারিদের সঙ্গে যদি পুলিশ থাকে, তাহলে তো আর বলার কিছুই থাকে না। এ জন্য গ্রামবাসী সশস্ত্র অবস্থান নিতে বাধ্য হন।
অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ কেন, জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে এম নজরুল দাবি করেন, পুলিশ তো তাঁদের সঙ্গে থাকার কথা নয়। সেখানে মনে হয়, কিছু ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ঠেকাতে ধলাই নদে পুলিশ নিয়মিত টহল দেয়। এ জন্য হয়তো পুলিশের দলটি সেখানে ছিল। এরপরও বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।
কালাপাথর বাঁধ এলাকা ধলাই নদের ইজারা দেওয়া বালুমহালের বাইরে বলে নিশ্চিত করেছেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন আচার্য। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ওই বাঁধসহ আশপাশের এলাকার পুরোটা ইজারাবহির্ভূত। কিন্তু বালুবাহী নৌযানগুলো ধলাই নদ দিয়ে চলাচল করার কৌশলে বালু উত্তোলন করছে, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। এ অবৈধ তৎপরতা বন্ধে তিন দফা টাস্ক ফোর্সের অভিযান চালানো হয়েছে।