গ্রামে একটা গরুর দাম এক লাখ টাকার বেশি। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-সদস্যরা গরু চুরির বিচারও করতে পারছেন না। ফলে স্থানীয় শান্তিশৃঙ্খলা ব্যাহত হচ্ছে। গ্রাম আদালতে বিচারের আর্থিক ক্ষমতা ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। তৃণমূলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হলে বিচারের আর্থিক ক্ষমতা বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকায় উন্নীত করতে হবে।
আজ শনিবার দুপুরে কক্সবাজার জেলা আইনগত সহায়তা প্রদান (লিগ্যাল এইড) কমিটির সমন্বয় সভায় এসব কথা তুলে ধরেন চকরিয়া উপজেলার পশ্চিম ভেওলা মানিকচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম।
গ্রাম আদালতের বিচারিক কার্যক্রম তুলে ধরে রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান খোদেস্তা বেগম ও চকরিয়ার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিমুল হক বলেন, জেলায় বর্তমানে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার প্রায় ৮০টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান। এ জন্য বিপুল পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ হচ্ছে। এ জেলায় বর্তমানে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। ভৌগোলিক কারণে মাদক পাচারের নিরাপদ রুট এটি। এ কারণে জেলায় মাদক মামলার সংখ্যা বাড়ছে অস্বাভাবিকভাবে। ফলে আদালতগুলোতে মামলার জটও বাড়ছে। এসব মামলা নিষ্পত্তিতে জনপ্রতিনিধিদের সহায়ক ভূমিকা রাখতে হবে। পাশাপাশি লিগ্যাল এইড কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে। এ জন্য গ্রাম আদালতে বিচারের আর্থিক ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি এর সংস্কার ও জনবল নিয়োগ দরকার।
সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা জজ আদালতের সম্মেলনকক্ষে শুরু হয় এ সমন্বয় সভা। সভাপতিত্ব করেন সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এবং লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসমাইল। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আবুল মনসুর সিদ্দিকী এবং জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা ও সিনিয়র সহকারী জজ সাজ্জাতুন নেছার সঞ্চালনায় বেলা তিনটা পর্যন্ত সভা চলে।
সভায় জেলার ৮টি উপজেলা, ৪টি পৌরসভা ও ৭১টি ইউনিয়নের মেয়র, চেয়ারম্যানসহ লিগ্যাল এইড কমিটির ৮৫ জন সদস্য অংশ নেন। এ সময় কমিটি গঠন ও সক্রিয়করণ এবং গ্রাম আদালত পরিচালনা–সংক্রান্ত বিষয়ে নানা সুপারিশ গৃহীত হয়।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, গ্রাম আদালত অর্থাৎ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের বিচারের আর্থিক ক্ষমতা বাস্তবতার তুলনায় খুবই কম। দেশ উন্নত হয়েছে। দেশের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়েছে। সে ক্ষেত্রে গ্রাম আদালতের বিচারের আর্থিক ক্ষমতা ৭৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখে উন্নীত করা উচিত।
এ বিষয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাঠানো হবে জানিয়ে মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় এবং আদালতের মামলাজট কমাতে স্থানীয় সরকার পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা অপরিসীম।
সভায় বক্তব্য দেন কক্সবাজারের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর মোহাম্মদ ফারুকী, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইকবালুর রশিদ আমিন, কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, আদালতের সাবেক সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, নুরুল মোস্তফা মানিক, মমতাজ আহমদ প্রমুখ।
জেলার বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা প্রায় ৯৫ হাজার বলে জানিয়েছেন জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল। তিনি বলেন, এর মধ্যে ১ হাজারের বেশি হত্যা ও ২০ হাজারের বেশি মাদক মামলা। এসব মামলা নিষ্পত্তির জন্য তাঁর (জেলা জজ) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি চারজন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের পদ সৃষ্টি হয়েছে।
কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম বলেন, লিগ্যাল এইড কমিটির কাজ কী, তা গ্রামের অধিকাংশ মানুষ জানেন না। বিনা খরচে সরকার ন্যায়বিচার পাওয়ার যে সুযোগ করে দিয়েছে, সেই খবরও তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছানো যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে সপ্তাহে এক দিন মসজিদ, মন্দিরসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রচারণা চালানো যেতে পারে।
সভায় আইনগত সহায়তা প্রদান আইন-২০০০–এর আলোকে উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটি গঠন ও সক্রিয়করণ–সংক্রান্ত নির্দেশনা দেন জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা ও সিনিয়র সহকারী জজ সাজ্জাতুন নেছা।