চট্টগ্রামে পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার ১০ আসামির রিমান্ড আবেদন নাকচ করেছেন আদালত। আজ সোমবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ রহমান শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে আদালত আসামিদের কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন।
আসামিরা হলেন ইমরান মাজেদ, মো. হানিফ, আবদুর রহিম, এস এম ইউসুফ, আমিরুল ইসলাম, আতিকুর রহমান, মো. শহীদ, মো. সালাউদ্দীন, মো. শাহজাহান ও আবদুল মালেক।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মো. কামরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কোতোয়ালি থানা-পুলিশ সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, এটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা। পূজামণ্ডপে হামলার চেষ্টার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা এবং এর পেছনে কারা জড়িত বের করতে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। তাঁদের রিমান্ড মঞ্জুর করা হোক।
আদালত সূত্র জানায়, শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, আসামিরা সবাই আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদ ও টেরিবাজারের দোকান কর্মচারী। ঘটনার দিন তাঁরা তাঁদের কর্মস্থলের পাশে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে গেটে আসার পর তাঁদের আটক করা হয়। তাঁরা হামলায় জড়িত নন। তাঁদের রিমান্ড বাতিল করা হোক।
আসামি আতিকুর রহমানের আইনজীবী জয়নাল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ রিমান্ড আবেদনে আসামিদের সঠিক নাম-ঠিকানা, ইন্ধনদাতা শনাক্ত ও লাঠিসোঁটা উদ্ধারের জন্য জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন বলে জানায়। আমরা শুনানিতে বলেছি, আসামিদের নাম-ঠিকানা সঠিক আছে। প্রত্যেকের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে। তাঁরা যেহেতু আন্দরকিল্লা মসজিদসংলগ্ন মার্কেটের কর্মচারী, সেহেতু তাঁরা সেদিন সেখানে নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন। কারও ইন্ধনে যাননি। ঘটনার দিন তাঁদের কারও হাতে লাঠিসোঁটা ছিল না। তাই কীভাবে উদ্ধার হবে?’
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিদের কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান।
কুমিল্লার ঘটনার জেরে গত শুক্রবার দুপুরে নগরীর আন্দরকিল্লা জে এম সেন হল পূজামণ্ডপে হামলা, গেটের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা ও মণ্ডপে ঢিল ছোড়া হয়। পরদিন শনিবার পুলিশ বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় ৮৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করে। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয় ৫০০ জনকে। নাম উল্লেখ করা আসামিদের বেশির ভাগই নগরের বৃহৎ পাইকারি কাপড়ের বাজার টেরিবাজার ও আন্দরকিল্লা মসজিদ মার্কেটের দোকানের মালিক ও কর্মচারী। মামলার এজাহারে বলা হয়, আন্দরকিল্লা এলাকার বাসিন্দা ইমরান মাজেদ ওরফে রাহুল ও মো. হানিফের নেতৃত্বে শুক্রবার জুমার নামাজের পর আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদের সামনে কুমিল্লায় কোরআন অবমাননার অভিযোগে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। তাঁরা দুজন টেরিবাজারের কাপড় ব্যবসায়ী।
এজাহারে ঘটনার বর্ণনায় বলা হয়, শুক্রবার জুমার নামাজের পর আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদের সামনে ৪০০ থেকে ৫০০ মানুষ হাতে লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁরা মসজিদের সামনে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে দেন। বাধা দিলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। এতে পুলিশের কয়েক সদস্য আহত হন। পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কোতোয়ালি থানার ওসি ফাঁকা গুলি ছোড়ে। একপর্যায়ে তাঁরা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পুরোনো কার্যালয়ের গেটে ভেঙে সেখানে ঢুকে ভাঙচুরের চেষ্টা করেন। এতে ৩০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ ছাড়া রহমতগঞ্জ রাস্তার মুখে পুলিশের তল্লাশিচৌকির ব্যারিকেড ভেঙে ২০ হাজার টাকা ক্ষতি করেন। সেখান থেকে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগরের শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে লাগানো দেবী দুর্গার ছবিসংবলিত ব্যানারে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ ছাড়া ব্যানারে ছিঁড়ে ফেলেন ও গেট ভাঙচুর করেন। এতে মোট দেড় লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।