ঘরেই স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে খুশি অন্তঃসত্ত্বা সাদিয়া

ব্র্যাকের কর্মীরা করোনার সংক্রমণ রোধে সচেতনতামূলক প্রচারপত্র বিলি করছেন। সব সময় মাস্ক পরতে ও টিকা নিতেও উদ্বুদ্ধ করছেন তাঁরা।

বাড়িতে গিয়ে রোগী শনাক্তের জন্য বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করছেন ব্র্যাকের স্বাস্থ্যকর্মীরা। গত মঙ্গলবার বাগেরহাট সদর উপজেলার সদুল্লাপুর গ্রামে।
ছবি: ইনজামামুল হক

সাড়ে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা সাদিয়া খাতুন। দেড় মাস আগে হঠাৎ তাঁর পা ফুলে যায়। কিছু জটিলতাও দেখা দেয়। জ্বরও আসে। করোনা কি না, সেই দুশ্চিন্তায় পড়েন সাদিয়া।

এ পরিস্থিতিতে কোথায় যাবেন, কী করবেন, এ নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে তাঁর পরিবার। স্থানীয় লাভলি বেগমের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পারেন ব্র্যাকের স্বাস্থ্যকর্মী কুলসুম বেগম। সেদিন বাড়ি গিয়ে শরীরের তাপমাত্রা, অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপ করেন তিনি। এরপর মুঠোফোনে ব্র্যাকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে সাদিয়াকে কথা বলিয়ে দেন তিনি। সব জেনে তাঁকে ওষুধ ও পরামর্শ দেন চিকিৎসক।

করোনাকালে বাড়িতে বসে এমন স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ায় খুশি সাদিয়া খাতুন (২০)। তাঁর মতো বাগেরহাট জেলার অনেকেই বাড়িতে বসে টেলিমেডিসিন সেবা পাচ্ছেন বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাধ্যমে। পাশাপাশি ব্র্যাকের কর্মীরা হাটবাজার, মসজিদ, মন্দির ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাস্ক ও করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সচেতনতামূলক প্রচারপত্র বিলি করছেন। সব সময় মাস্ক পরতে ও টিকা নিতেও উদ্বুদ্ধ করছেন তাঁরা।

সাদিয়া খাতুনের বাড়ি বাগেরহাট সদরের খানপুর গ্রামের পূর্বপাড়ায়। সাদিয়ার স্বামী আবুল কাশেম শেখ বলেন, ‘এই আপারা থাকায় আমরা চিন্তামুক্ত থাকি। তাঁরা নিয়মিত খোঁজখবর নেন।’

ব্র্যাকের স্বাস্থ্য পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির অধীনে করোনা প্রতিরোধে তিন মাসব্যাপী নেওয়া কর্মসূচির আওতায় চলছে এ কার্যক্রম। এর আওতায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা দেওয়ার পাশাপাশি জেলার ৯ উপজেলায় ৩৬০টি হটস্পট চিহ্নিত করে কাজ করছেন তাঁরা। করোনা প্রতিরোধে ‘সামাজিক দুর্গ’ নামে জুন থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচি চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।

কুলসুম বেগম প্রথম আলোকে বলেন, করোনা প্রতিরোধ, সচেতনতা বৃদ্ধি, শনাক্তকরণ ও টিকা গ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণ—এই চারটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে সামাজিক দুর্গ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিদিন অন্তত ২০টি করে খানা পরিদর্শন করেন তিনি।

কর্মসূচির বাগেরহাট সদর কার্যালয়ের এলাকা ব্যবস্থাপক মাছুদুর রহমান বলেন, ‘এ পর্যন্ত জেলায় আমরা ৯ লাখ মাস্ক বিতরণ করেছি। করোনা সম্পর্কে ৫৩ হাজার ৯৫ খানায় আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা সরাসরি গিয়ে সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। জেলায় করোনা সংক্রমিত হওয়া ৫ হাজার ১৫৪ জনকে সেবা ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এঁদের মধ্যে ৪ হাজার ৬৫২ জনকে টেলিমেডিসিনের সহায়তায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বিনা মূল্যে ওষুধও সরবরাহ করা হয়।’

মঙ্গলবার দুপুরে বাগেরহাট সদরের মাজারের হাটের প্রবেশপথে মাইকে করোনা বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে দেখা যায়। পাশেই ব্র্যাকের দুজন কর্মী বিতরণ করছেন মাস্ক ও সচেতনতামূলক প্রচারপত্র। তাঁদের একজন ব্র্যাকের হটস্পট মোবিলাইজার হাওলাদার ইসরাফিল বলেন, শহরের কাছের এই হাট করোনার হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত। জেলায় এমন ৩৬০টি হটস্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে হাজির হন ষাটগম্বুজ ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আক্তারুজ্জামান। তিনিও যোগ দেন ওই দুই তরুণের সঙ্গে মাস্ক বিতরণে।

জানতে চাইলে বাগেরহাটের সিভিল সার্জন কে এম হ‌ুমায়ূন কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার শুরু থেকে ব্র্যাক আমাদের সহায়তা করছে। আমাদের জনবলসংকট ছিল। করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ থেকে শুরু করে অ্যান্টিজেন টেস্টে ব্র্যাকের প্রশিক্ষিত কর্মীরা আমাদের সহায়তা করছেন।’

ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির পরিচালক মোর্শেদা চৌধুরী বলেন, এ কর্মসূচিতে ৪১টি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) অংশ নিচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, এসকেএস ফাউন্ডেশন, দুস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ওয়াটার এইড বাংলাদেশ ও ব্র্যাক সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছে। মোর্শেদা চৌধুরী জানান, চারটি স্তম্ভের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। সেগুলো হলো করোনার প্রতিরোধমূলক সচেতনতা তৈরি, মাস্ক বিতরণ, রোগ শনাক্তকরণ ও ব্যবস্থাপনা এবং টিকা নিয়ে সচেতনতা তৈরি।