চকরিয়ার ১০৫ গ্রামের মানুষ পানিবন্দী

চকরিয়া উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের পূর্বপাড়া এলাকা ভারী বর্ষণে প্লাবিত হয়েছে। বুধবার দুপুরে
ছবি: এস এম হানিফ

ঘরের মেঝে ছুঁই ছুঁই পানি। সব আসবাবপত্র মাচাংয়ে তোলা শেষ। কিছু কিছু জিনিস পলিথিন মুড়িয়ে রাখা হয়েছে। পরিবারের সদস্যরাও উঁচু স্থানে আশ্রয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। শিশু সায়মা ও তাহসিন শখের ছাগল দুটো বুকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। সরেজমিনে আজ বুধবার বেলা একটার দিকে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের পূর্ব পাড়ায় এ চিত্র দেখা গেছে।

সায়মা ও তাহসিনের বাবা রফিক আহমদ (৪০) বলেন, ‘ভারী বর্ষণে ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। পরিবারের পাঁচ সদস্যকে নিয়ে মহাসড়কের ধারে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিতে বের হয়েছি। মঙ্গলবার রাত থেকে ঘরে রান্না হয়নি। মহাসড়কে পলিথিনের ছাপরা টেনে সেখানে রান্না করে খাব।’

শুধু কাকারা ইউনিয়নের পূর্ব পাড়া নয়, ইউনিয়নটির লুটনি, মাইজ কাকারা, জলদাশ পাড়া, কসাইপাড়া, পাল পাড়া ও মিনি বাজার এলাকার অন্তত এক হাজার পরিবার ভারী বর্ষণে ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শওকত ওসমান বলেন, মাতামুহুরী নদীর কিনারায় কাকারার বেশির ভাগ এলাকা। নদীর কয়েকটি জায়গা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ দেওয়া না হলে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান ভেঙে পুরো ইউনিয়নের ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়বেন।

চকরিয়ার বিএম চর ইউনিয়নের কইন্যারকুম এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে পাহাড়ি ঢলের পানি লোকালয়ে ঢুকছে। বুধবার দুপুরে
ছবি: এস এম হানিফ

উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের ফাইতং সড়ক ও মানিকপুর সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এ দুই সড়কে যান ও জন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। সুরাজপুর-মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক বলেন, তাঁর ইউনিয়নের দুটি সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া দুই হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অনেক পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পানিবন্দী মানুষের মাঝে শুকনা খাবার দেওয়া হচ্ছে। ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে মাতামুহুরী আশপাশের বেড়িবাঁধ ভেঙে পড়বে।

এ ছাড়া চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, ফাঁসিয়াখালী, সাহারবিল, বিএম চর, কোনাখালী, ঢেমুশিয়া, পূর্ব বড় ভেওলা, চিরিংগা, পশ্চিম বড় ভেওলা, বদরখালী ও ডুলাহাজারা ইউনিয়নের বেশির ভাগ গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বিএমচর ইউনিয়নের কইন্যারকুম ও ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পাগলির বিল এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে নদীর পানি ঢুকছে।

চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পাগলির বিল এলাকায় পানিবন্দী মানুষের মাঝে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন বিত্তবান ব্যক্তিরা। বুধবার বেলা ১১টার দিকে
প্রথম আলো

লক্ষ্যারচর ইউপি চেয়ারম্যান জি এম কাইছার বলেন, লক্ষ্যারচরের মণ্ডলপাড়া, হাজি পাড়া, জহিরপাড়া, রোস্তম আলী চৌধুরী পাড়া, পশ্চিম পাড়া, পূর্ব পাড়া, চর পাড়ার চার হাজার মানুষ ভারী বর্ষণে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। মাতামুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় লোকালয় থেকে পানি বের হচ্ছে না। এতে গ্রামীণ সড়ক ও ঘরবাড়ি প্লাবিত হচ্ছে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৬টি ইউনিয়নের ১০৫টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। প্লাবিত মানুষজনকে বিলি করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ৭২ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রাত থেকে শুকনা খাবার হিসেবে গুড়, মুড়ি ও চিড়া বিতরণ করা হবে। পানিবন্দী মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে মাইকিং করা হচ্ছে।