চট্টগ্রাম নগরের একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র জাকিরুল কাইয়ুম। নগরের জিইসি মোড় থেকে বিশ্ব কলোনি এলাকায় যাতায়াত করেন তিনি। এই দূরত্বের জন্য নির্ধারিত বাসভাড়া ১২ টাকা। শিক্ষার্থী হিসেবে তাঁর কাছ থেকে নেওয়ার কথা ৬ টাকা। কিন্তু চালকের সহকারী তা নিতে রাজি নন। আবার পুরো ভাড়া দেবেন না জাকিরুল। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। শেষ পর্যন্ত অর্ধেক ভাড়া দিয়ে গাড়ি থেকে নামেন তিনি।
গতকাল সোম ও আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক বাসভাড়া চালু করা হলেও, তা পুরোপুরি মানা হচ্ছে না। অনেক বাসে এখনো পুরো ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। কিছু কিছু বাসে অর্ধেক ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। আর অর্ধেক ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চালক ও সহকারীদের কথা-কাটাকাটি হচ্ছে নিয়মিত। তবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পুরো ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পরিবহনমালিকেরা।
পরিবহনমালিকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত শনিবার থেকে চট্টগ্রাম নগরের শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়া (হাফ পাস) চালু হয়। গত রোববার পাঁচ শর্তে শিক্ষার্থীদের বাসভাড়া অর্ধেক করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। দেশের সব মহানগরে (মেট্রোপলিটন এলাকায়) এ ভাড়া কার্যকর হবে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে প্রজ্ঞাপনটি প্রকাশ হয়। শিক্ষার্থীরা হাফ পাস চালুর দাবিতে সম্প্রতি রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে আন্দোলন শুরু করেছিল।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে নগরের লালখান বাজারে মেট্রো প্রভাতী বাসের জন্য কাউন্টারে অপেক্ষা করছিল স্কুলছাত্র ইয়াছিন ভূঁইয়া। নগরের কাঠগড় এলাকায় তার বাসা। তবে তার কাছ থেকে পুরো ভাড়া নেওয়া হয়। এই স্কুলছাত্র প্রথম আলোকে বলে, বাসা থেকে আসার সময়ও পুরো ভাড়া নেওয়া হয়েছে। যাওয়ার সময়ও একই অবস্থা। শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়ার কথা বলা হলেও, তা অনেকেই মানছে না। আবার অর্ধেক ভাড়া না নেওয়ার কোনো যুক্তিও দিতে পারছেন না গাড়ির লোকজন। তবে অবশ্যই অর্ধেক ভাড়া নেওয়া উচিত।
মেট্রো প্রভাতীর টিকিট বিক্রেতা আলী আকবর প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছে অর্ধেক ভাড়ার টিকিট বিক্রি না করতে মালিকপক্ষ নিষেধ করেছে। এখানে তাঁর কিছু করার নেই। মালিকপক্ষ যদি বলে অর্ধেক ভাড়া নিতে, তাহলে তিনি অর্ধেক ভাড়ায় টিকিট বিক্রি করবেন।
নগরের ওয়াসা মোড়ে কথা হয় কলেজছাত্র মেহেদী হাসানের সঙ্গে। তিনি ১০ নম্বর রুটের একটি বাসে করে বহদ্দারহাট থেকে ওয়াসা মোড়ে আসেন। তিনি বলেন, তাঁদের এই পথের ভাড়া ৮ টাকা। তবে পরিচয়পত্র দেখানোয় ৪ টাকা নেওয়া হয়।
১০ নম্বর রুটের (কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে পতেঙ্গা) একটি বাসের চালকের সহকারী মোহাম্মদ রেজাউল করিম টাইগারপাস মোড়ে প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীরা পরিচয়পত্র দেখালে তখন অর্ধেক ভাড়া নেওয়া হয়। তবে ৪ নম্বর রুটের (সিটি গেট থেকে নিউমার্কেট) বাসচালক মো. আলমগীর বলেন, ছাত্রছাত্রীরা অর্ধেক ভাড়া দিতে চায়। কিন্তু মালিকেরা এ বিষয়ে কিছু বলেননি। এ জন্য তাঁরা পুরো ভাড়া নেন।
অর্ধেক ভাড়া নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সাইফুর রুদ্র প্রথম আলোকে বলেন, অর্ধেক ভাড়া চালু করা হলেও, অনেক বাসেই তা মানা হচ্ছে না। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিবহনশ্রমিকদের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, অর্ধেক ভাড়া নিয়ে কোনো অভিযোগ তাঁরা পাননি। শিক্ষার্থীরা পরিচয়পত্র দেখালে অর্ধেক ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
তবে অনেক শিক্ষার্থী হয়তো আত্মসম্মানবোধের কারণে পরিচয়পত্র দেখাতে আগ্রহী না। আর মেট্রো প্রভাতীর বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা টিকিট ছাপানোর জন্য দেওয়া হয়েছে। তিন-চার দিনের মধ্যে তা চলে আসবে। তখন থেকে আর পুরো ভাড়া দিতে হবে না।