চতুর্থ দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত

যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ভবদহ অঞ্চলের মানুষ। কালেক্টরেট ভবন চত্বর, যশোর, ১২ জানুয়ারি
ছবি: এহসান-উদ-দৌলা

যশোরের ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনসহ ছয় দফা দাবিতে চতুর্থ দিনের মতো আজ বুধবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ভুক্তভোগী তিন শতাধিক নারী-পুরুষ। ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির ডাকে তাঁরা দুপুর ১২টা থেকে বিকেল পর্যন্ত এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

গত রোববার দুপুর থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অনির্দিষ্টকালের জন্য লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন জলাবদ্ধ ভবদহ অঞ্চলের মানুষ। আজ কর্মসূচি পালনের সময় তাঁরা তাঁদের দাবির পক্ষে মুহুর্মুহু স্লোগান দেন।

ছয় দফা দাবি হলো প্রস্তাবিত প্রায় ৪৫ কোটি টাকার ‘ভবদহ ও তৎসংলগ্ন বিল এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ’ সেচ প্রকল্প বাতিল, ক্রাস প্রোগ্রামে মাঘী পূর্ণিমার আগেই বিল কপালিয়া টিআরএম (টাইডল রিভার ম্যানেজমেন্ট বা জোয়ারাধার) চালু, ভবদহ স্লুইচ গেটের ভাটিতে ৫–৬টি এক্সকাভেটর দিয়ে পাইলট চ্যানেল খনন ও ২১, ৯, ৬ ভেন্টের গেটগুলো ওঠানামার ব্যবস্থা করা, জনপদের ফসল, বাড়িঘরসহ অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির ক্ষতিপূরণ, কৃষিঋণ মওকুফ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আমডাঙ্গা খাল সংস্কারকাজে প্রি-ওয়ার্ক ও পোস্ট ওয়ার্ক জনসমক্ষে টাঙিয়ে দেওয়া ও কাজের স্বচ্ছতা নিরূপণে আন্দোলনকারী সংগঠন ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে তদারকি কমিটি গঠন করা এবং সরকারকে মিথ্যা তথ্য প্রদান, নদী হত্যা, জনপদের অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশা, ফসল, বসতবাড়ি ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে জড়িত পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ।

আজ দুপুর ১২টার দিকে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রনজিত বাওয়ালীর নেতৃত্বে একটি মিছিল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আসে। মিছিলের সামনের দিকে ছিল একটি ট্রাক্টর। এ সময় ‘পানি সরাও, জীবন বাঁচাও’, ‘জীবন বাঁচাও, পানি সরাও’ স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে গোটা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বর। পরে তাঁরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। তাঁদের অনেকের হাতে ছিল বিভিন্ন দাবি লেখা প্ল্যাকার্ড। অনেকের মাথায় মাথাল, কাঁধে লাঙল, জোয়াল, মই, নিড়ানি ও হাতে জাতীয় পতাকা ছিল।

কর্মসূচিতে আসা অভয়নগর উপজেলার ধোপাদী গ্রামের কৃষক হরেকৃষ্ণ সরকার বলেন, ‘স্থানীয় জনপ্রতিনিধি চান না ভবদহ জলাবদ্ধতার অবসান হোক। কেননা তাঁরা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আমাদের দুরবস্থার কথা কখনোই জানাননি। উনারা চান, এই জল দেখিয়ে রিলিফ এনে সেগুলো আত্মসাৎ করতে।’

অভয়নগরের ডুমুরতলা গ্রামের গৃহবধূ ইলাবতী বিশ্বাস বলেন, ‘বাড়িঘরে জল। থাকার মতো পরিবেশ নেই। আমাদের দাবি টিআরএম। টিআরএম হলে জলডা পড়ে যাবে।’

পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির সদস্যসচিব চৈতন্য পাল বলেন, ভবদহ অঞ্চলের ব্যাপক এলাকা জলমগ্ন। স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা সবখানেই পানি। বাড়ি থেকে রাস্তায় বেরোনোরও উপায় নেই। সম্প্রতি জলে ডুবে দুই শিশুসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চললেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পাউবো ও কতিপয় ঘেরমালিকের আঁতাতের ফলে জলাবদ্ধতার অবসান হচ্ছে না। অথচ দু–দুবার জাতীয় কমিটির মিটিংয়ে ভবদহ এলাকায় টিআরএমের ব্যবস্থা পাস হলেও শুধু ওই জনপ্রতিনিধির কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি। জলাবদ্ধ এলাকার মানুষ পানির দামে তাদের গৃহপালিত পশু-পাখি বিক্রি করছে।

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রনজিত বাওয়ালী বলেন, ‘পানিনিষ্কাশনে আমডাঙ্গা খাল সংস্কারে ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। আমাদের দাবি, আমডাঙ্গা খাল সংস্কারে আরও কিছু বরাদ্দ দিয়ে অন্তত ১০০ মিটার চওড়া করতে হবে। খাল চওড়া না হলে পানি নিষ্কাশিত হবে না। আগামী দুই মাসের মধ্যে ৫-৬টি এক্সকাভেটর লাগানো হলে কৃষকেরা সেখানে চাষাবাদ করতে পারবে। আমরা অন্তত দুটো মোটা ভাত খেয়ে আর মোটা কাপড় পরে বাঁচতে পারব।’

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির বলেন, ‘কাল বৃহস্পতিবার থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করব।’

বক্তব্য দেন ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী আবদুল হামিদ, কমিটির নেতা অনিল বিশ্বাস, শিবপদ বিশ্বাস, কার্ত্তিক বকসি, সাধন বিশ্বাস, নীলকণ্ঠ মণ্ডল, কানু বিশ্বাস, প্রণব বিশ্বাস, পলাশ মোল্যা প্রমুখ। সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন যশোর শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মাহামুদ হাসান, উদীচী যশোরের পক্ষে আমিনুর রহমান, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির পক্ষে সুকুমার ঘোষ প্রমুখ।