চবিতে সংঘর্ষের পর ১২ ছাত্রলীগ কর্মীকে বহিষ্কার

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও মারামারির পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি মামলার পর ১২ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির জরুরি সভায় বহিষ্কারের এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গত বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল পর্যন্ত পুরোনো ঘটনার জেরে সংঘর্ষে জড়ায়।

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সংগঠন চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি) ও সিক্সটি নাইন। তাঁদের মধ্যে সিএফসির নেতা-কর্মীরা শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী। আর সিক্সটি নাইনের নেতা-কর্মীরা সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী। বর্তমানে সিএফসির নেতৃত্বে আছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক। সিক্সটি নাইনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন। চার দিনের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ১২ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁরা সংঘর্ষ ও মারামারিতে লিপ্ত হয়েছিলেন।

বহিষ্কৃত যাঁরা

বহিষ্কৃতদের মধ্যে সিক্সটি নাইনের ছয়জন এবং সিএফসির ছয়জন কর্মী রয়েছেন। ছয় মাস বহিষ্কৃত সিক্সটি নাইনের কর্মীরা হলেন আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের মো. নাঈম, বাংলা বিভাগের একই বর্ষের সাইফুল ইসলাম, পরিসংখ্যান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের আকিব জাভেদ, ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তরের জুনায়েদ হোসেন এবং অর্থনীতি বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের মো. ফরহাদ। এক বছরের জন্য বহিষ্কার হয়েছেন রসায়ন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের আশরাফুল আলম।

অন্যদিকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কৃত সিএফসির কর্মীরা হলেন সমাজতত্ত্ব বিভাগের স্নাতকোত্তরের আরিফুল ইসলাম, আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের খালেদ মাসুদ, আরবি বিভাগের প্রথম বর্ষের তৌহিদ ইসলাম, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষের তানজিল হোসেন, লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের অহিদুজ্জামান সরকার। এ ছাড়া এক বছরের জন্য বহিষ্কার হয়েছেন আইন বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের মির্জা কবির সাদাফ।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, এই শিক্ষার্থীরা বহিষ্কারের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসে থাকতে পারবেন না।

যে কারণে সংঘর্ষ

গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী সিএফসির চার কর্মীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে হেনস্তার অভিযোগ দেন। লিখিত অভিযোগে বলা হয়, তাঁরা দুজন ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে ক্যাম্পাসে গেলে সিএফসির ওই চার কর্মী হেনস্তা করেন। এই চারজন হলেন আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জুনায়েদ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রুবেল হাসান, দর্শন বিভাগের ইমন আহাম্মেদ ও আর এইচ রাজু।

এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে পোস্ট দেন সিক্সটি নাইনের কর্মী শিহাব আরমান। তিনি গত শুক্রবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, দুই ছাত্রীকে হেনস্তার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তিনি। এ নিয়ে পোস্টও দেন। মূলত এ ঘটনার জেরেই সিএফসির প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের নেতা-কর্মীরা তাঁকে মারধর করেছেন। এটি থেকেই সংঘর্ষের সূত্রপাত।

তবে সিএফসির নেতা-কর্মীদের দাবি, সিএফসির কর্মী তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বান্ধবীর সঙ্গে শহীদ মিনারে বসে ছিলেন। এ সময় তাঁর বান্ধবীকে শিহাব দুবার উত্ত্যক্ত করেন। পরে তাঁরা শিহাবকে প্রতিহত করেছেন। ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার জন্য তাঁকে মারধর করা হয়নি। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, সংঘর্ষের ঘটনা সমাধানের চেষ্টা চলছে।

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৪ অক্টোবর সিক্সটি নাইনের কর্মী ও বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী শিহাব শহীদ মিনার থেকে গোলচত্বর এলাকায় হেঁটে আসছিলেন। পথে সিএফসির প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের কর্মীরা তাঁকে মারধর করেন। সেখানে ছিলেন আরবি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন। পরে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। গতকাল রোববার রাতে দুই পক্ষই পাল্টাপাল্টি মামলা করে।