চার দশক পর করম উৎসবে মাতোয়ারা মাধাইপুরের মানুষ

চার দশক পর করম উৎসব উদ্‌যাপন করছেন তুরি সম্প্রদায়ের মানুষ। এ সময় তাঁরা ঐতিহ্যবাহী নাচ–গান পরিবেশন করেন। গতকাল চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাধবপুরে
ছবি: প্রথম আলো

চার দশক পর দাশাই করমে মাতোয়ারা হয়েছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার ক্ষুদ্রজাতিগোষ্ঠী তুরিদের গ্রাম মাধাইপুরের মানুষ। দুর্গাপূজার দশমীকে অনুসরণ করে করমগাছের ডাল পূজাকে ঘিরে এ উৎসবের নাম দাশাই করম উৎসব।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত মাধাইপুর গ্রামে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। গত বুধবার রাত থেকে গ্রামের উপবাসী কুমারী মেয়েরা করমগাছের (খিলকদম) ডাল কেটে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গ্রামের আখড়ায় পুঁতে রাখেন।এরপর পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষে করমগাছের ডাল ঘিরে চলে নাচ-গান। গতকাল সকালে আখড়া থেকে ডাল তুলে উপবাসী মেয়েরা নেচে–গেয়ে বাড়িতে বাড়িতে ডাল নিয়ে যান। এ সময় ওইসব বাড়ি থেকে মেয়েদের চাল ও টাকা উপহার দেওয়া হয়। পরে ওই ডাল গ্রামের পুকুরে বিসর্জন দিয়ে খাবার খান মেয়েরা।

করম উৎসবের নাচ–গানে মাদল বাজাতে পেরে গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ বেংলু সুরেন দারুণ খুশি। বেংলু সুরেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘চল্লিশ বচ্ছর পর মাদল বাজাতে হাত কাঁপছিল। খুশিতে বুকও কাঁপছিল। হারিয়া যাওয়া এ পরবকে পায়া কী যে আনন্দ লাগছে বুঝিয়্যা কোহিতে পারব না।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর ও নওগাঁর পোরশা উপজেলার তুরি জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একমাত্র ছাত্র কাজল পাড়ে। তিনি জানান, এ গ্রামে একসময় মহাসমারোহে করম উৎসব উদ্‌যাপন করা হতো। গ্রামের সব বয়সী নারীরা গ্রামের খোলা জায়গায় নাচ–গানের চর্চা করতেন মাসব্যাপী। গ্রামের বয়স্ক মানুষের কাছে তিনি জানতে পারেন উৎসবটি ৪০ বছর ধরে উদ্‌যাপন করা হয় না। তিনি গ্রামের মানুষের কাছে প্রস্তাব দেন উৎসবটি আবারও উদ্‌যাপন করার। এতে অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া যায়। বাড়ি বাড়ি থেকে চাল ও ১০০ টাকা করে চাঁদা তুলে এ উৎসবের ব্যয়ভার মেটানো হয়।

কাজল পাড়ে বলেন, উৎসবকে ঘিরে গ্রামের মানুষের মাঝে সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি হয়েছে। গ্রামের আশপাশের বাঙালিরাও উৎসবে এসে আনন্দ উপভোগ করেছেন।