খুলনার গুরুত্বপূর্ণ সেতু
চালুর আগে নির্মাণত্রুটিতে ক্ষোভ
ডুমুরিয়া উপেজলার চরচরিয়া-শিবনগর পয়েন্টে এখন খেয়াঘাট রয়েছে। সেতুটি চালু হলে খুলনা শহরে যাওয়া-আসার দূরত্ব ২০ কিলোমিটার কমত।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চরচরিয়া-শিবনগর পয়েন্টে ভদ্রা নদীর ওপর সেতুর নির্মাণকাজ সাড়ে পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। ছয় দফা সময় বাড়িয়েও কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এদিকে সেতুটি চালু হওয়ার আগেই ‘নির্মাণত্রুটি’ ধরা পড়ায় স্থানীয় লোকজেনর মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
সেতুটি চালু হলে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের উপকার হবে। খুলনা ও সাতক্ষীরার চারটি উপজেলার সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা সুগম হবে। খুলনা শহরে আসার দূরত্ব কমবে, বাঁচবে অর্থ আর সময়।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চরচরিয়া-শিবনগর পয়েন্টে বর্তমানে খেয়াঘাট রয়েছে। সেতুটি চালু হলে খুলনার কয়রা, পাইকগাছা, ডুমুরিয়ার মাগুরখালী এবং সাতক্ষীরার তালা উপজেলার কিছু অংশের মানুষের খুলনা শহরে যাওয়া–আসার দূরত্ব ২০ কিলোমিটার কমত।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) খুলনা সূত্র বলছে, কয়রা-পাইকগাছার সঙ্গে খুলনা এবং ডুমুরিয়া এলাকার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ সহজ করতে ভদ্রা নদীর ওপর পিসি (প্রিস্ট্রেসড কংক্রিট) গার্ডার সেতু নির্মাণে প্রকল্প নেয় সংস্থাটি। যশোরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএমবি-আইটি (জেভি) সেতুর কাজ করছে। ডুমুরিয়ায় উপজেলার ‘বসুন্দিয়াডাঙ্গা বাজার-মাগুরখালী ইউপি অফিস’ সড়কের চরচরিয়া-শিবনগর পয়েন্টে সরকারি অর্থায়নে নির্মাণাধীন ওই সেতুটির দৈর্ঘ্য ৩১৫ দশমিক ৩ মিটার ও প্রস্থ ৭ দশমিক ৩ মিটার। নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
এলজিইডি সূত্রটি বলছে, সেতুর জন্য ২০১৬ সালে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। তবে আইনি জটিলতার কারণে ২০১৭ সালে নভেম্বরে কাজ শুরু হয়। কাজ শেষ করার কথা ছিল ২০১৯ সালের মে মাসে। পরে আরও ছয় দফা সময় বাড়িয়ে চলতি বছরের জানুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার সময় নির্ধারণ করা হয়। সেই সময়ও পেরিয়ে গেছে। বর্তমানে সপ্তমবারের মতো সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সম্প্রতি সরেজমিনে প্রকল্প এলাকায় শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা গেল। সাতটি স্প্যানই বসে গেছে। সৌরবাতি বসানো হয়েছে। সংযোগ সড়কের জন্য বালু ভরাট করা আছে। সেতুর চরচরিয়ার পারে ২ নম্বর পিলার আর শিবনগরের পারে ৬ নম্বর পিলার তুলনা করলে দেখা যায়, ২ নম্বর পিলারটি নিচু। আর এ কারণে ওই পিলারে বসানো স্প্যানের বক্রতা কমে খানিকটা সোজা হয়ে গেছে।
ডুমুরিয়ার ঘুরুনিয়া গ্রামের বিশ্বজিৎ কুমার মণ্ডল বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে কাজ চলছে তো চলছেই। কবে শেষ হবে তার কোনো ঠিক নেই। আর ব্রিজের দিকে তাকালে যে কেউই বুঝবে চরচরিয়া অংশের দ্বিতীয় পিলারটি দেবে আছে। এর কারণে ব্রিজটি ঘাড়বাঁকা হয়ে গেছে।’
ডুমুরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী মোহা. রবিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মূল সেতুর কাজ ৯৯ শতাংশ শেষ হয়েছে। জুনের আগেই চালু করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ এগিয়ে চলছে। কাঠামোগত কোনো ত্রুটি নেই। তবে নিচ থেকে দেখলে ১ ও ২ নম্বর স্প্যানের মাঝখানে একটু নিচু মনে হচ্ছে।
প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেতুটিতে কারিগরি কোনো ত্রুটি নেই। তবে নান্দনিকতা (অ্যাস্থেটিক ভিউ) কমবে। সেতুর কাজ শুরুর আগে ভূসংস্থানিক জরিপের (ট্রপোগ্রাফিক্যাল সার্ভে) সময় কোনো এক পারের রিডিউস লেভেলের (আরএল) হিসাবে ভুল ছিল। এ কারণে দুই পারের নির্দিষ্ট দুটি পিলারের তুলনামূলক উচ্চতায় হেরফের হয়েছে। এই ত্রুটি কাগজে–কলমে ঠিক করা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল। ঠিক করতে গেলে স্থায়িত্ব নিয়ে ঝামেলা হতে পারে বলে মত তাঁদের।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী প্রলয় কুমার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমরা নকশা অনুযায়ীই কাজ করেছি। করোনার এবং চুক্তির সময়ের চেয়ে পরে কিছু কাজ বাড়ায় নির্মাণকাজ কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে। সব কাজ প্রায় শেষ। দুই পার মিলিয়ে ৩০০ মিটারের মতো অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ আর কার্পেটিং বাকি। বালু ভরাট প্রায় শেষ। মাসখানেকের মধ্যে আমরা সব কাজ শেষ করতে পারব।’
এলজিইডি খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সেতুর একটা অংশে লেভেলটা মেলেনি। ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ দল সেতুটি দেখে গেছে। এখনো তাঁরা লিখিত মতামত জানাননি। তাঁদের প্রতিবেদন হাতে পেলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।