প্রতীকী ছবি

বগুড়ায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশনের (বিসিক) শিল্পনগরী এলাকার একটি কারখানার দুই নৈশপ্রহরীকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দুই আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় বগুড়ার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ শাহরিয়ার তারিকের আদালতে আসামিরা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

আসামিরা হলেন ওই কারখানার গাড়িচালকের সহকারী ও শহরের নারুলী তালপট্টি এলাকার রাহাত (২১), কারখানার সাবেক শ্রমিক ও একই এলাকার বাসিন্দা সুমন ব্যাপারী (২৭)। এ ছাড়া গ্রেপ্তার আরেক আসামি কারখানার গাড়িচালক হোসাইন বিন মিল্লাত ওরফে নিনজারের (৩৪) দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আলী হায়দার চৌধুরী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে কারখানার মালামাল চুরিতে বাধা দেওয়ার জেরে দুই নৈশপ্রহরী আবদুল হান্নান (৪৮) ও শামসুল ইসলামের (৬০) মাথায় রড দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয় বলে দুই আসামি স্বীকার করেছেন। হত্যাকাণ্ডের পর অপহরণের কথা বলে কারখানার মালিকের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করলেও সফল হননি।

জবানবন্দিতে আসামি রাহাত বলেছেন, কারখানা থেকে গাড়ি আনলোডের সময় গাড়িচালক হোসাইন বিন মিল্লাত ও তিনি অতিরিক্ত মালামাল গোপনে গাড়িতে তুলে বাইরে বিক্রি করে দিতেন। বিষয়টি টের পেয়ে কারখানার দুই নৈশপ্রহরী বাধা দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে এবং কারখানার মালিকের কাছে বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়ে দুই নৈশপ্রহরীকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।

রাহাত বলেন, ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে শহরের সাতমাথায় শহীদ খোকন পার্কে কারখানার সাবেক শ্রমিক সুমন ব্যাপারীর সঙ্গে দেখা হয়। এ সময় সুমন গাড়িচালক হোসাইনের কাছে ১০ হাজার টাকা ধার চান। এ সুযোগে হোসাইন ২ লাখ টাকার লোভ দেখিয়ে সুমনকে এই কাজের জন্য ভাড়া করেন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে তাঁরা একসঙ্গে কারখানায় ঢোকেন। এরপর প্রথমে নৈশপ্রহরী হান্নানকে রড দিয়ে মাথার পেছনে আঘাত করে পানির হাউসে ফেলে দেন। আরেক নৈশপ্রহরী শামসুলকেও ঘুম থেকে ডেকে তুলে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়।

পরে চালক হোসাইন বিন মিল্লাতের কথামতো অপহরণের নাটক সাজিয়ে কারখানার মালিকের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। এ ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পর ২৫ ফেব্রুয়ারি বেলা তিনটার দিকে মেসার্স মাছু অ্যান্ড সন্স ইন্ডাস্ট্রিজের পানির হাউস থেকে দুই নৈশপ্রহরীর লাশ উদ্ধার হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বগুড়া গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপপরিদর্শক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, দুই আসামি রাহাত ও সুমন ব্যাপারী আদালতে স্বেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এদিকে মামলার আরেক আসামি হোসাইন বিন মিল্লাতকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

এর আগে শনিবার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সদর থানায় মামলা করেন নৈশপ্রহরী হান্নানের স্ত্রী হীরা বেগম। মামলার এজাহারে অপহরণের পর মুক্তিপণ না পেয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। পরে ডিবি পুলিশকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।