লকডাউন
প্রতীকী ছবি

চুয়াডাঙ্গায় ভারত সীমান্তবর্তী উপজেলা দামুড়হুদায় ১৪ দিনের লকডাউন দিয়েছে প্রশাসন। সোমবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক সভা শেষে এ ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক। এর আগে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম লকডাউনে ছিল।

এদিকে চুয়াডাঙ্গায় আরও ৫৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। জেলায় ২৪ ঘণ্টার হিসেবে এটাই সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। নতুন ৫৭ জনের মধ্যে ৩৫ জনই দামুড়হুদা উপজেলার।

উপজেলা প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গেছে, ২ জুন থেকে দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম এবং পরে ৫ জুন থেকে কুড়ুলগাছি ও পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের আরও নয়টি গ্রামে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ওই পদক্ষেপ পুরোপুরি কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। ফলে এসব এলাকায় করোনা শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

জরুরি এই পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণের জন্য সোমবার দুপুরে দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার ছাড়াও পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলি মুনছুর, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দিলারা রহমান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে দামুড়হুদা উপজেলাকে পুরোপুরি ১৪ দিনের লকডাউন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
নজরুল ইসলাম সরকার, জেলা প্রশাসক এবং জেলা কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি

সভা শেষে বেলা দুইটায় জেলা প্রশাসক এবং জেলা কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে দামুড়হুদা উপজেলাকে পুরোপুরি ১৪ দিনের লকডাউন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।

সভায় অংশগ্রহণের আগে জেলা প্রশাসক প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘লকডাউন যাঁরা বাস্তবায়ন করবেন, তাঁদের মতামতের প্রয়োজন আছে। সবচেয়ে বড় প্রয়োজন জন-অংশগ্রহণ বা জনগণের সহযোগিতা-সম্পৃক্ততা। এলাকাবাসী সহযোগিতা করলেই আমরা এই অতিমারির হাত থেকে রক্ষা পাব।’

যেখানে জাতীয়ভাবে করোনা শনাক্তের হার গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ দশমিক ৩৯ শতাংশ, সেখানে চুয়াডাঙ্গায় শনাক্তের এই হারকে উদ্বেগজনক বলছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাবে, গত ২৪ ঘণ্টায় কুষ্টিয়ার আরটিপিসিআর ল্যাব থেকে চুয়াডাঙ্গার ১৩২ জনের নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এই ১৩২ জনের ৫৭ জন করোনা ‘পজিটিভ’। শনাক্তের হার ৪৩ দশমিক ১৮ শতাংশ। গত এক সপ্তাহে জেলায় গড় শনাক্তের হারও ৪৩ শতাংশ।

যেখানে জাতীয়ভাবে করোনা শনাক্তের হার গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ দশমিক ৩৯ শতাংশ, সেখানে চুয়াডাঙ্গায় শনাক্তের এই হারকে উদ্বেগজনক বলছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগকে ভাবিয়ে তুলেছে। বিশেষ করে ভারত সীমান্তবর্তী দামুড়হুদায় করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় উদ্বেগ বাড়ছে। জেলায় নতুন যে ৫৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, তার মধ্যে ৩৫ জনই দামুড়হুদা উপজেলার। অন্যদের মধ্যে সদর উপজেলার ১৩ জন, জীবননগর উপজেলার ৭ জন এবং আলমডাঙ্গার ২ জন।

চুয়াডাঙ্গা-২ (দামুড়হুদা-জীবননগর) আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলী আজগার টগর প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর নির্বাচনী এলাকায় করোনা শনাক্তের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন। এর অংশ হিসেবে আইসোলেশনে থাকা ব্যক্তিদের পাশাপাশি হতদরিদ্রদের বাড়িতে এক সপ্তাহ ধরে খাদ্যসহায়তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি পরিবার পাচ্ছে ২০ কেজি করে চাল, ১ কেজি মসুর ডাল, ১ লিটার সয়াবিন তেল, ৩ কেজি আলু, ১ কেজি পেঁয়াজ, লবণ ও সাবান। এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, চুয়াডাঙ্গায় মোট ১০ হাজার ৬৬৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ হাজর ২৭৯ জনের। এর মধ্যে ১ হাজার ৮৮৬ জন ইতিমধ্যে সুস্থ হয়েছেন। অন্তত ৭১ জন করোনায় সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন। বর্তমানে ২৮৩ জন বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন। এ ছাড়া ৩৬ জনকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ও তিনটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে; তিনজনকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন এ এস এম মারুফ হাসান বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা শহরে ১৯৫ শয্যার ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালের পাশাপাশি প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলায় আইসিইউ না থাকলেও নিরবচ্ছিন্নভাবে উচ্চশক্তির অক্সিজেন সরবরাহের জন্য ৬ হাজার লিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপন করা হয়েছে।